বাসযাত্রার সঙ্গে আমরা মোটামোটি সবাই পরিচিত। দাঁড়ানোর জায়গা নেই ভেতরে। মানুষের হট্টগোল, কত ধরনের শব্দ। তবু এর মধ্যে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে আপনার পাশের সিটে থাকা মানুষটি, কখনও আবার আপনি নিজেও। চলন্ত যানবাহনে কেন ঘুমিয়ে পড়ে মানুষ? এর পেছনে কি ক্লান্তি জড়িয়ে? নাকি যানবাহনে উঠলেই ঘুমিয়ে নেওয়ার কারসাজি আদতে স্নায়ুরই? স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমিয়ে পড়ার নেপথ্যে রয়েছে মস্তিষ্কের থ্যালামাস-হাইপোথ্যালামাস অংশের ভূমিকা। শরীরে অক্সিজেনের অভাব হলেই হাই ওঠে, পেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন ঘুমের প্রয়োজন হয়। আবার অনেকের মধ্যেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘুমিয়ে পড়ার স্বভাব আছে। আধুনিক জীবনযাত্রায় অনিদ্রা বা ‘ইনসমনিয়া’ যেমন দুশ্চিন্তার কারণ, তেমনই অতিরিক্ত ঘুম বা ‘সমলোলেন্স’ ও উদ্বেগের বিষয়। ক্লান্তি থাকুক বা না থাকুক, অনেকেই যেখানে-সেখানে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন সহজে। এক্ষেত্রে গাড়ির দুলুনি বা গতি শরীরকে আরাম দেয়। সামান্য আরাম পেলেই তাদের স্নায়ুগুলো তাতে সাড়া দেয়। এতে ‘হাইপক্সিয়া’ বা ঘুমের উদ্রেক হয়। মস্তিষ্কের কোষে অক্সিজেনের অভাবে ক্লান্তিজনিত যে ঘুম আসে আর আরামজনিত কারণে আমাদের যে ঘুম পায়, তা একে অপরের পরিপূরক।
ঘুম ও শারীরবৃত্তীয় কাজের সম্পর্ক : ঘুমের অস্বাভাবিকতা বুঝতে হলে, ঘুম ও শারীরবৃত্তীয় কাজের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে হবে। মানুষের শারীরবৃত্তীয় কাজের মধ্যে অন্যতম একটি হলো ঘুম। এটি শরীরের নানা দিকের ভারসাম্য রক্ষা করে। পাশাপাশি মানুষের সারা দিনের কাজকেও নিয়ন্ত্রণ করে। চিকিৎসকদের মতে, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক ঘুমের ব্যাপ্তি হওয়া উচিত ৬-৮ ঘণ্টা। এসময়ের মধ্যে ঘুমে প্রায় চার-পাঁচটি ঘুমচক্র চলে। তবে অধিকাংশ সময়েই দেখা যায়, এই সিøপিং সাইকেল ঠিকমতো গঠিত হয় না। থেকে যায় ঘুমের ঘাটতি। যেহেতু এই বিষয়টি সহজে বোঝা যায় না, তাই অনেক সময় মনে হয়, এই তো ঘুমিয়ে উঠলাম, ফের ঘুম পাচ্ছে কেন! এরসঙ্গে ট্রেনের দুলুনি, বাস বা অন্য যানবাহনের গতি শরীরে আরাম এনে দেয়। তাই ঘুমিয়ে পড়ে মানুষ। শারীরিক ক্লান্তির ওপর ঘুমনির্ভর করে। যানবাহনে চড়লেই যদি ঘুমিয়ে পড়েন, তবে রাতের ঘুমে মন দিন। স্ট্রেস ফ্রি থাকতে চেষ্টা করুন। আর ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমের পরও যদি দীর্ঘদিন এই অভ্যাস থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।