ঢাকা ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহ

পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি

পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি

ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অন্যতম সহযোগী ওয়াগনার গ্রুপ বিদ্রোহ করেছে। ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিপক্ষে লড়াইয়ের পরিবর্তে এখন উল্টো রুশ বাহিনীর জন্যই বড় হুমকি হয়ে উঠেছে তারা। ভাড়াটে যোদ্ধাদের এই গ্রুপটির প্রধান ইভজেনি প্রিগোজিন হুমকি দিয়েছেন, রুশ নেতৃত্বকে তারা ক্ষমতাচ্যুত করে ছাড়বেন এবং এই পথে যারাই বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তাদের ধ্বংস করে দেওয়া হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাশিয়ার ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে।

প্রিগোজিনের সঙ্গে কয়েক মাস ধরেই রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্বন্দ্ব চলছে। গত শুক্রবার তিনি অভিযোগ করেন, তার বাহিনীর ওপর মারাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে মস্কো এবং এর কঠিন প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার তিনি।

এক অডিওবার্তায় প্রিগোজিন বলেন, রুশ নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করতে প্রয়োজনীয় সব কিছু করবেন তারা। আর এই পথে যা কিছু বাধা হয়ে

দাঁড়াবে তাদেরকেও ধ্বংস করে দেওয়া হবে। ওয়াগনার গ্রুপের এই হুমকির পর রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার এবং সতর্কতা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।

প্রিগোজিন দাবি করেছেন, তার বাহিনী রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় রোস্তভ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। তবে এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি। তার এই হুমকির পর রোস্তভের সব বাসিন্দাকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মস্কোর দক্ষিণে লিপেটস্ক অঞ্চলের গভর্নর ইগর আর্টামনভ বলেছেন, অঞ্চলটিতে নিরাপত্তা জোরদারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমি সবাইকে শান্ত থাকতে বলছি।

সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্য প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাশিয়ার এফএসবি সিকিউরিটি সার্ভিস। ওয়াগনার প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানির বাহিনীকে প্রিগোজিনের আদেশ উপেক্ষা করে তাকে গ্রেপ্তার করার আহ্বান জানিয়েছে মস্কো।

ওয়াগনারের ‘সশস্ত্র বিদ্রোহের প্রচেষ্টা’ মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। ১৬ মাস আগে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে সম্ভবত এটিই তার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে। ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধারা তাদের কমান্ডারের হুমকি কার্যকর করতে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে, এমন দৃষ্টান্ত এখনো দেখা যায়নি। তবে একটি রুশ হেলিকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করেছেন প্রিগোজিন। এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, যারা রাশিয়াকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে তাদেরকে শাস্তি পেতে হবে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, রাজধানী মস্কো এবং অন্যান্য কয়েকটি অঞ্চলে এখন সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলছে।

পুতিন বলেন, রাশিয়ার ভবিষ্যৎ এখন হুমকির মুখে। বিদ্রোহীদের কার্যকলাপকে তিনি ‘পিঠে ছুরিকাঘাত বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইভজেনি প্রিগোজিনের নাম উল্লেখ না করে বলেন, কারো কারো উচ্চাকাঙ্ক্ষা ‘তীব্র রাষ্ট্রদ্রোহিতার’ দিকে যাচ্ছে। ওয়াগনার যোদ্ধাদের কথা উল্লেখ না করেই তিনি বলেন, কিছু রাশিয়ানকে কৌশলে অপরাধমূলক দুঃসাহসিক কাজের দিকে ধাবিত করা হচ্ছে। হঠাৎ করেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পট বদলে গেছে। এতদিন রাশিয়াকে সমর্থন করা ওয়াগনার গ্রুপ হঠাৎ করেই পাল্টে গেছে। রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে তারা। ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিপক্ষে লড়াইয়ে রুশ সেনাদের সমর্থনের বদলে এবার রুশ বাহিনীর ওপরই হামলা করছে তারা। এর মধ্যেই রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের একটি সামরিক সদরে দপ্তরে ওয়াগনার প্রধান ইভজেনি প্রিগোজিনকে দেখা গেছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় রোস্তভ-অন-ডন এলাকার সামরিক দপ্তরে প্রবেশ করেন তিনি। একটি ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা গেছে, রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেরগেই শোইগু এবং জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভ তাদের সঙ্গে দেখা করতে না আসলে তার সৈন্যরা শহর অবরোধ করবে এবং মস্কোর দিকে অগ্রসর হবে।

তিনি বলেন, আমরা এখানে পৌঁছেছি, আমরা চিফ অব জেনারেল স্টাফ এবং সেরগেই শোইগুর সঙ্গে দেখা করতে চাই। তারা না আসা পর্যন্ত আমরা এখানে থাকব। আমরা রোস্তভ শহর অবরোধ করব এবং মস্কোর দিকে রওনা হব।

অপর একটি ফুটেজে দেখা গেছে, দুজন জেনারেলকে সঙ্গে নিয়ে বসে আছেন প্রিগোজিন। এদের একজন আর্মি লেফটেন্যান্ট-জেনারেল ভ্লাদিমির আলেকসেয়েভ। এর আগে ওয়াগনার প্রধানকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন ওই জেনারেল। ধারণা করা হচ্ছে, তারা এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে হাত মিলিয়েছেন। পুরো পরিস্থিতিই কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে গেছে। তবে রাশিয়াকে রক্ষা করার অঙ্গীকার করে সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুতিন।

প্রিগোজিনের সঙ্গে কয়েক মাস ধরেই রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্বন্দ্ব চলছে। গত শুক্রবার তিনি অভিযোগ করেছেন, তার বাহিনীর ওপর মারাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে মস্কো এবং এর কঠিন প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। এক অডিওবার্তায় প্রিগোজিন বলেছেন, রুশ নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করতে প্রয়োজনীয় সব কিছু করবেন তারা। আর এই পথে যা কিছু বাধা হয়ে দাঁড়াবে সেগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হবে।

ওয়াগনার গ্রুপের এই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার এবং সতর্কতা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রিগোজিন দাবি করেছেন, তার বাহিনী রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় রোস্তভ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। তবে এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি তিনি।

তার এই হুমকির পর রোস্তভের সব বাসিন্দাকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মস্কোর দক্ষিণে লিপেটস্ক অঞ্চলের গভর্নর ইগর আর্টামনভ বলেছেন, অঞ্চলটিতে নিরাপত্তা জোরদারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমি সবাইকে শান্ত থাকতে বলছি। রাশিয়ার নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ওয়াগনার গ্রুপের ২৫ হাজার সৈন্য মরতে প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেছেন ভাড়াটে বাহিনীর প্রধান ইভজেনি প্রিগোজিন। গতকাল এক অডিওবার্তায় হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সবাই মরতে প্রস্তুত, পুরো ২৫ হাজার, এরপর আরও ২৫ হাজার। আমরা রুশ জনগণের জন্য মরছি। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ টেলিগ্রামে প্রকাশিত বার্তায় প্রিগোজিন জানান, তার বাহিনী এরই মধ্যে ইউক্রেন ছেড়ে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী শহর রোস্তভ-অন-ডনে প্রবেশ করেছে।

ওয়াগনার গ্রুপের এই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার এবং সতর্কতা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।

সিএনএন জানিয়েছে, গতকাল সকালে রোস্তভ শহরের ওপর দিয়ে সামরিক হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেছে। রাস্তায় রাস্তায় মোতায়েন করা হয়েছে সাঁজোয়া যান। তবে এসব সামরিক যান কাদের নিয়ন্ত্রণে সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। রোস্তভের গভর্নর ভ্যাসিলি গোলুবেভ বাসিন্দাদের শান্ত থাকতে এবং বাড়ি থেকে বের না হতে পরামর্শ দিয়েছেন। রোস্তভ শহরটি রাশিয়ার দক্ষিণে, দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের সীমান্তের কাছে এবং মস্কো থেকে প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার দূরে। মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বলেছেন, টেলিগ্রামে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শহরে ‘সন্ত্রাসবিরোধী ব্যবস্থা’ নেওয়া হচ্ছে।

কিয়েভ বলেছে, তারা মস্কোর অন্তর্দ্বন্দ্ব পর্যবেক্ষণ করছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক টুইটে বলেছে, ‘পরিস্থিতি আমরা দেখছি’। ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভ বলেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ান দলগুলো ‘ক্ষমতা এবং অর্থের জন্য একে অপরকে খেতে শুরু করেছে। খবর বিবিসি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত