ঢাকা ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গরু পালনে ভাগ্যবদল বীরগঞ্জের খামারিদের

গরু পালনে ভাগ্যবদল বীরগঞ্জের খামারিদের

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শিবরামপুর ইউনিয়নে মানুষের প্রধান পেশা খেতখামারে কাজ করা। এর পাশাপাশি তারা গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই গরু রয়েছে। এর মধ্যে বেশি গরু পালন করা হয় ইউনিয়নের সাহাডুবি, মুরারীপুর, আরাজি মিলনপুর, ভেলাপুকুর ও গণপৈত গ্রামে। দেশি গরুর পাশাপাশি রয়েছে ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল ও সংকর জাতের গরু। শামীম মিয়া-শিরিন বেগম দম্পতির বাড়ি শিবরামপুর ইউনিয়নের সাহাডুবি গ্রামে। ৫ বছর আগেও তাদের বাড়ি ছিল টিনের চালা-বাঁশের বেড়া দেওয়া। টিনশেডের গোয়ালঘরটি ছিল বেশ মজবুত। স্বামী-স্ত্রীর যত ব্যস্ততা গরু-গোয়ালঘর নিয়ে। গরু মোটাতাজাকরণ করে তাঁরা লাভবান হয়েছেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক গত বছর রংপুর বিভাগে সেরা খামারির পুরস্কারও পেয়েছেন। গেল বছর চার কক্ষবিশিষ্ট পাকা বাড়ি করেছেন। জমি কিনেছেন ৭৫ শতক। বাড়িসংলগ্ন একটি হাস্কিং মিল বসিয়েছেন। দুই ছেলেমেয়েকে স্কুলে পড়াচ্ছেন।’ গণপৈত গ্রামের খামারি সোলায়মান আলী। আটটি গরু আছে তার। খামারের একপ্রান্তে খাটে বিছানা-বালিশ। সম্প্রতি চোরের উপদ্রব দেখা যাচ্ছে। সতর্ক থাকতে গোয়াল ঘরের এক কোণাতেই রাতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করেছেন। বিভিন্ন হাটে গিয়ে অপেক্ষাকৃত কম স্বাস্থ্যবান গরু সস্তায় কেনেন তারা। পাঁচণ্ডছয় মাস খামারে লালন-পালন করেন। যে গরু ৭০ হাজার টাকায় কেনেন, ৬ মাস পর সেটি বিক্রি হয় ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। শিবরামপুর ইউনিয়নের গরু দিনাজপুরের ফাসিলাডাঙ্গা, ফার্মেরহাট, বীরগঞ্জ, কাহারোল, গোলাপগঞ্জ, পঞ্চগড়ের বোদা ও ঠাকুরগাঁওয়ের খোঁচাবাড়িসহ বেশ কয়েকটি হাটে বিক্রি হয়। সাহাপুর গ্রামের অশ্বিনী রায় (৫৫)। যাদের গরু কেনার সামর্থ্য নেই, বড় খামারিরা তাদের এক থেকে চারটি পর্যন্ত গরু বর্গা দিয়েছেন। সেই গরু বাজারজাত করা হলে মূল টাকা বাদ দিয়ে লাভের অঙ্ক হয় তিন ভাগ, যার এক ভাগ পান মালিক, দুই ভাগ বর্গাচাষি। বর্গা চাষ করতে করতেই কপাল খুলেছে কারো কারো। বর্গাচাষি থেকে খামারি হয়েছেন। ভাগ্য বদলে যাওয়াদের একজন প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। তিনি কৃষিশ্রমিক ছিলেন। মাঠের কাজ শেষে গরুর জন্য এক-দুই বস্তা ঘাস সংগ্রহ করে আনতেন। এভাবে একটি থেকে পাঁচটি পর্যন্ত গরু বর্গায় চাষ করেছেন। কয়েক বছরের মধ্যে প্রফুল্ল খামারি হয়ে ওঠেন। এখন নিজের খামারে আটটি গরু। তুলেছেন পাকা বাড়ি। শিবরামপুরে বাণিজ্যিকভাবে গরুর খামার গড়ে তোলা বেশি দিন আগের কথা নয়। দু-চারটা গরু প্রায় সবার ঘরেই ছিল। তেমনি একজন মুরারীপুর গ্রামের সালমা বেগম। ২০০৭ সালের কথা। একদিন উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে গরুর খুরারোগের চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। দুই দিন পরে আবার গরু নিয়ে আসেন সালমার ছেলে মনিরুল (৩৫)। তার সঙ্গে আলাপ হয় কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার। পশু চিকিৎসা ও মোটাতাজাকরণ করার বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পান মনিরুল। প্রশিক্ষণ শেষে ছোট পরিসরে বাণিজ্যিক খামার গড়ে তোলেন। পাশাপাশি শুরু করেন চিকিৎসাসেবা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে মনিরুলের নেতৃত্বে মুরারীপুর গ্রামে ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রজেক্টের আওতায় ২০ জনকে নিয়ে গরু পালনের একটি দল গঠন করা হয়। দলের সদস্যদের বলা হয় সিআইজি (কমন ইন্টারেস্ট গ্রুপ) সদস্য। প্রাণিসম্পদ অফিস তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে মনিরুলকে ইউনিয়ন সম্প্রসারণ প্রতিনিধি নিয়োগ করে। বর্তমানে শিবরামপুর ইউনিয়নে তিনটি সিআইজি দলে ৬০ জন সদস্য। প্রতিটি দলের সঞ্চয় হয়েছে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। বীরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ওসমান গনি বলেন, উপজেলায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গরু লালন-পালন হয়। সর্বনিম্ন পাঁচটি গরু থাকলে খামারি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উপজেলায় খামারি রয়েছেন ৫ হাজার ৩৬৮ জন। প্রায় ২৬ হাজার গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে। এখানকার খামারিরা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে গরু পালন করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত