খালেদা জিয়া অসুস্থতার ঝুঁকিতেই আছেন
জানালেন ফখরুল
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে কিছুটা ভালো হলেও অসুস্থতার ঝুঁকি আছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল সোমবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থার কথা জানান তিনি। এর আগে গত রোববার রাতে গুলশানে ‘ফিরোজা’য় খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ম্যাডাম এবার হাসপাতাল থেকে ফিরে আসার পরে একটু ভালো আছেন। উনার যে সমস্যাগুলো আগে ছিল, সেগুলো এখন আর নেই। তিনি কিছুটা ভালো অনুভব করছেন। কিন্তু উনার (খালেদা জিয়া) মূল সমস্যা সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, উনার মূল সমস্যা লিভার সিরোসিস আছে, সিরিয়াস আর্থ্রাইটিস আছে, হার্টের প্রোব্লেম আছে। এগুলোর জন্য তার ডাক্তাররা বারবার বলেছেন, মেডিকেল বোর্ড বলেছে, বাইরের বিশেষায়িত হাসপাতালে তার চিকিৎসা করার প্রয়োজন আছে। সেটা তো হচ্ছে না। সেজন্য যেটা আমরা বলি উনার রিস্ক (ঝুঁকি) সেটা থেকে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১৩ জুন রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনকে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৭ জুন বাসায় ফেরেন তিনি। ৭৮ বছর বয়সি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা ও লিভারের রোগ, হৃদরোগে ভুগছেন। ২০২১ সালের এপ্রিলে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে কয়েকবার নানা অসুস্থতা নিয়ে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। গত বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার পরিপাকতন্ত্রের রক্তক্ষরণ ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা।
২০১০ সালে সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়ার পর থেকে গুলশানে বাসভবন ফিরোজায় বসবাস করছেন খালেদা জিয়া। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত নাজিমউদ্দীন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন তিনি।
কারাগারে থাকা অবস্থায় চিকিৎসার জন্য একাধিকবার তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর ওই বছরের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে আবার ফিরোজায় থাকছেন তিনি। সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আহ্বান : বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দেবে বিএনপি। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্দলীয় সরকার নিয়ে আরো সুস্পষ্টভাবে কথা বলব। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা দেওয়ার জন্য আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করছি। দেশে যারা সংবিধান বিশেষজ্ঞ আছেন বা আইনজীবী আছেন, তারা তাদের মতো করে মতামতগুলো দেবেন। সেখান থেকে একটা ভালো জিনিস বের হয়ে আসবে। তবে আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ যা চাইবে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন থাকতে হবে প্রতিটি প্রস্তাবের মধ্যে। বা নিবার্চকালীন সরকারের রুপরেখা সেখানে থাকতে হবে।
গতকাল গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব একথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এখনো বলছি, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যবস্থা করা হোক। তবে নির্বাচনের আগে তাদের পদত্যাগ করতে হবে। এটা খুবই জরুরি। কারণ এই সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে কোনোভাবেই নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না।
ঈদের পরে আন্দোলন আরো জোরদার ও বেগবান হবে এ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলন আরো বেগবান করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, মানুষকে বোকা বানিয়ে ভুল বুঝিয়ে, এই ধরনের মিথ্যাচার করে চলেছে। তারা বলে আমাদের অর্থনীতি খুব ভালো আছে। অথচ প্রত্যেক অর্থনীতিবিদ বলবেন- দেশে অর্থনৈতিক সংকট চলছে এবং এই সংকট অত্যন্ত ভয়াবহ ধরনের। কোন দিক থেকে বলব, রির্জাভ একেবারে কমে গেছে, আমদানি করতে পারছে না। ব্যাংকগুলো থেকে অর্থপাচার হয়ে গেছে। অর্থনীতিতে এই সংকট সমাধান করার কোনো ব্যবস্থায় সরকার গ্রহণ করেনি। উপরন্তু আমরা দেখলাম ব্যাংকের ডিরেক্টরদের ১২ বছর করে বাড়িয়েছে, যা প্রস্তাবেও ছিল না।