সুসংবাদ প্রতিদিন

শরীয়তপুরের কৃষি খাতে সুবাতাস

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

পদ্মা সেতু শুধু যোগাযোগ স্থাপনই নয়, দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়নের পালেও হাওয়া লাগিয়েছে। শরীয়তপুরের কৃষি খাতেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। বেড়েছে কৃষি খাতে বিনিয়োগ। যে কারণে চলতি বছরেই শরীয়তপুরের জাজিরার সবজি যাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। বাজারজাত করা সহজ হওয়ায় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে নতুন ফসল উৎপাদনে কৃষকদের মাঝে উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগও ফসল উৎপাদনে কৃষকদের পাশে থেকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নির্দেশনা দিচ্ছে।

কৃষি বিভাগ পদ্মা সেতুকে ঘিরে সম্ভাবনাময় ফুল চাষের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছে জাজিরা উপজেলায়। এর আগে জাজিরায় ‘চাষি বাজার’ নামে একটি পাইকারি শাকসবজির বাজার গড়ে উঠলেও যোগাযোগব্যবস্থার কারণে ঢাকার ব্যবসায়ীরা শরীয়তপুরে কম যেতেন। ফলে সেখানকার ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতেন চাষিরা। পদ্মা সেতু হওয়ার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই বাজার থেকে সবজি রপ্তানি করা হচ্ছে। এখানকার সবজি সুইজারল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

এছাড়া পদ্মা সেতু ঘিরে এরই মধ্যে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগের বাস্তবায়নও শুরু হয়ে গেছে। যেমন, গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নে মিরহা অ্যান্ড নাবা ফ্যাশন নামে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি চালু হয়েছে। তারা এক বছর ধরে ঢাকায় সরবরাহসহ বিদেশে পোশাক রপ্তানি করছে। দ্রুত গতিতে চলছে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লির কাজও। ফলে আর্থসামাজিক অবস্থা দ্রুত বদলে যাচ্ছে শরীয়তপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের। বাড়ছে বিনিয়োগ ও ব্যবসায় উদ্যোগ, কমছে বেকারত্বের হার।

গোসাইরহাট গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির শ্রমিক মো. তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, আগে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করতাম। সেখানে যে বেতন পেতাম তা দিয়ে আমাদের চলতে খুবই কষ্ট হতো। এখন আমাদের এলাকায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি হওয়ায় বাসা ভাড়া লাগছে না। অনেক কম টাকায় বাজার-সদাই করতে পারছি। এতে আমাদের খুব উপকার হয়েছে। নড়িয়া উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা রকি আহম্মেদ বলেন, আগে আমাদের উৎপাদিত পণ্য শরীয়তপুরের বাইরে নেওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য ছিল। তাই আমরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতাম। পদ্মা সেতু হওয়ার এক বছরে আমরা অনেকটা এগিয়ে গেছি। এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। বিদেশেও আমাদের সবজিগুলো রপ্তানি করতে পারছি। এগিয়ে যাচ্ছে শরীয়তপুরের কৃষি খাত।

মিরহা অ্যান্ড নাবা ফ্যাশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক মুসা হাওলাদার বলেন, আমার ছোটবেলা থেকেই শখ ছিল শরীয়তপুরে একটি পোশাক কারখানা দেব। পদ্মা সেতু হওয়ায় সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। নিজ গ্রামের বেকার মানুষের কর্মসংস্থান করতে পেরে আমি খুশি। আমরা পদ্মা সেতুর এক বছরে অনেক পণ্য রপ্তানি করেছি। আরও বিনিয়োগ বাড়িয়ে প্রতিষ্ঠানকে প্রসারিত করব। শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও নড়িয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম ইসমাইল হক বলেন, শুধু কৃষি খাত নয়, শরীয়তপুরে এক সময় গাজীপুরের মতো পোশাক কারখানার হিড়িক পড়বে, যা শুধু এই অঞ্চলের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে না, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাবে।

কৃষিবিজ্ঞানী মফিজুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণবঙ্গের মানুষকে পণ্য নিয়ে আর বসে বসে ভাবতে হয় না। যে কোনো সময় তারা এখন তাদের পণ্য ঢাকায় পাঠাতে পারছে। এতে করে শরীয়তপুরের কৃষকরা খুবই আনন্দিত। আর জাজিরার চাষি বাজার থেকে কয়েক মাসে তিনবার ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সবজি রপ্তানি হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (খামারবাড়ি) মো. রবীআহ নুর বলেন, জাজিরাসহ শরীয়তপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে রসুন, পেঁয়াজ এবং পাটের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ মসলাজাতীয় ফসল ও সবজি উৎপাদন হয়। পদ্মা সেতুর সুফলে তাদের এই ফসল এখন ইউরোপের মতো দেশে রপ্তানি হচ্ছে। তাছাড়া জেলায় উদ্যোক্তাও অনেক বাড়ছে, যা পদ্মা সেতু দিয়ে কৃষকরা ঢাকার বাজারে বিক্রি করে বেশি লাভবান হচ্ছেন। বেকারত্ব দূরসহ অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি এই কৃষি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে। আগামীতে দেশের কৃষি খাতের প্রধান জেলা হবে শরীয়তপুর।