ফরিদপুরের ভাঙ্গায় অ্যাম্বুলেন্সের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আটজন নিহতের ঘটনায় তিন শোকাহত পরিবারকে সান্ত¡না ও সমবেদনা জানাতে নিহতদের বাড়িতে যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের মাইটকুমড়া গ্রামের আলমগীর খান এবং বেলা ১২টার দিকে গুনবহা ইউনিয়নের ফেলাননগর উত্তরপাড়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী মো. আজিজার শেখের বাড়িতে গিয়ে নিহত তাসলিমা বেগমের তাসলিমার বেঁচে থাকা ছোট মেয়ে চায়না (২৫) ও ছেলে আনিস শেখকে (১৮) শান্ত¡না দেন।
এ সময় আব্দুর রহমান বলেন, এই শোক বর্ণনা দেয়ার মতো নয়, এই শোক সইবার মতো নয়। আবেগতাড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘কী সান্ত¡না দেব। একটা পরিবার থেকে তার স্ত্রী, সোনার মতো দুটো ছেলে ও একটি মেয়ে, শালিকা ও তার ছেলে, শাশুড়িসহ সাতজন স্বজন চলে গেছে। আল্লাহ পাক তার ধৈর্য্য ধারণ করার ক্ষমতা দিক।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দলের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নিজেই এই ঘটনায় অত্যন্ত মর্মাহত। তিনি এই পরিবারের খোঁজখবর নেয়ার জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ধরনের দুর্ঘটনা সত্যিই অভাবনীয়। আল্লাহ নিহত পরিবারবর্গকে ধৈর্য্যধারণ করার ক্ষমতা দিক, এটাই শুধু বলব আজকে। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বোয়ালমারী পৌর মেয়র সেলিম রেজা লিপন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি (সাবেক) আবুল কালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মৃধা মিলন, সহ-প্রচার সম্পাদক এনামুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সিদ্দিক খান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল সিকদার, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ সেলিমুজ্জামান লিটু, দাউদুজ্জামান দাউদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনজুর হোসেন তুশার, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আশিকুর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ মর্তুজা তমাল, সাধারণ সম্পাদক প্রান্ত সিদ্দিক, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিদুল প্রমুখ। প্রসঙ্গত, বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফেলাননগর উত্তরপাড়া গ্রামের সৌদিপ্রবাসী মো. আজিজার শেখের স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৫০) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিয়ে মেয়ের বাসায় অবস্থান করছিলেন। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে সামনে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঢাকার কদমতলী এলাকা থেকে গ্রামের বাড়ি ফেলাননগরের উদ্দেশে তার দুই মেয়ে, চার নাতি-নাতনীসহ সাতজন গত ২৪ জুন সকাল ৯টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা থেকে রওনা দেন। পথিমধ্যে বেলা ১১টার দিকে ভাঙ্গা-ঢাকা এক্সপ্রেস ওয়ের মালিগ্রাম ফ্লাইওভারের অ্যাপ্রোচ সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি ব্রিজের রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে গাড়িতে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তের মধ্যে দাউদাউ করে গাড়িতে জ্বলা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় তাদের দেহ। এ দুর্ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা চালকসহ আটজন দগ্ধ হয়ে মারা যান। নিহতরা হলেন- আজিজার শেখের স্ত্রী তাসলিমা বেগম, তার বড় মেয়ে শেখর ইউনিয়নের মাইটকুমড়া গ্রামের আলমগীর খানের স্ত্রী কমলা পারভীন (৩২), কমলা পারভীনের বড় ছেলে আরিফ (১৩), মেঝ ছেলে হাসিব (৮), কন্যা আফসা (২), তাসলিমার মেঝ মেয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলা আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের কুচিয়াগ্রামের সেনা সদস্য মাহামুদুল হাসান রনির স্ত্রী মোসা. বিউটি পারভীন (২৭), বিউটি পারভীনের ছেলে মেহেদী (১০) এবং অ্যাম্বুলেন্সচালক ফরিদপুরের বাসিন্দা মিতুল মালোকে (২৪)। গতকাল সোমবার দুপুরে নিহত পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে ২০ হাজার টাকার চেক প্রদান করে জেলা প্রশাসন।