চট্টগ্রামজুড়ে শেষ মুহূর্তে পশুর বাজার জমজমাট। নগরী ও আশপাশজুড়ে এখন যেন গবাদি পশুর হাট। বৈধ হাটের পাশাপাশি অসংখ্য অবৈধ হাটে কোরবানির পশু কেনাবেচা হচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন, গরুর দাম অনেক বেশি। বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে চড়া দাম ধরে রেখেছেন। এজন্য ক্রেতাদের চেয়ে বিক্রেতারাই বেশি ঠকবেন। দেখা যাবে শেষ মুহূর্তে বিপুল গরু অবিক্রিত রয়ে গেছে। আর বিক্রেতারা বলেছেন, গরু লালন-পালনে ব্যয় বেড়ে গেছে। খামারে গরুর পেছনে ব্যয় করতে হয়েছে অনেক বেশি। তাই মনপ্রতি হিসাব করে দাম বেশি রাখা হচ্ছে। বর্তমান দামে গরু বিক্রি না করলে ক্ষতির মুখে পড়বেন ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিন ষোলশহর, বিবিরহাট বাজার, সাগরিকা গরুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নানা সাইজের কোরবানির পশু নিয়ে এসেছেন বেপারিরা। তবে দাম চড়া। ছোট সাইজের গরুর প্রতি বরাবরের মতো ক্রেতাদের চাহিদা বেশি। গত বছর ছোট সাইজের যে গরু ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে এবার তার দাম ১ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। অনেকে দেদার কিনছেন। তাদের আশঙ্কা শেষ মুহূর্তে বাজারে গরু নাও মিলতে পারে। তাই দাম যাই হোক কিনে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ মনে করছেন তারা।
ষোলশহর বিবিরহাটে গরু কিনতে আসা ইসমাইল হোসেন বলেন, দিনভর ঘুরলাম চড়া দামের কারণে কিনতে পারিনি। শেষ দিকে হয়তো হয়তো দাম কমতে পারে। তখন কিনব। তার মতে বিক্রেতারা আরো সহনীয় পর্যায়ে গবাদি পশুর দাম হাঁকতে পারতেন। তারা বেশি আয়ের লোভে পড়েছেন।
নগরীর পাহাড়তলী এলাকার সাগরিকা গরুর বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ কোরবানিদাতার আগ্রহ ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর প্রতি। বিক্রেতারাও জানান, মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি। সেই চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে বিক্রির জন্য বাজারে প্রচুর ছোট-মাঝারি সাইজের গরু আমদানি হয়েছে। মাঝারি সাইজের গরুগুলো বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা। মাঝারি সাইজ থেকে একটু বড় হলেই গরুর দাম ছাড়াচ্ছে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ, বড় গরুর দাম হাঁকাচ্ছে ২ লাখ টাকার বেশি।
তবে বিক্রেতারা বেশ জোর দিয়ে বলছেন, বড় গরু কিনলে ক্রেতারা লাভবান হবেন। কারণ, বড় গরুর ক্রেতা কম। বিক্রিও কম। চাহিদা কম থাকায় দাম তেমন বেশি নয়। আর মাংসের পরিমাণের তুলনা করলে ছোট মাঝারি সাইজের গরুর চাইতে বড় সাইজের গরুতে লাভের পাল্লা ভারি হবে ক্রেতাদের। এদিকে বাজারে মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা থাকলেও বড় সাইজের গরু খুব কম বিক্রি হচ্ছে মনে করেন ক্রেতারা। সাগরিকা গরুর বাজারে আসা ক্রেতা ইউসুফ বলেন, অনেকে বড় সাইজের গরু কেনার দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে যৌথভাবে যারা কোরবানি দিচ্ছেন তারাই বড় সাইজের গরু বেশি কিনছেন। বড় সাইজের গরুর দাম হাঁকাচ্ছে ৬ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত। আরো বেশি দামের গরু মিলছে বাজারে। কয়েকটি বাজারে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা দামের গরুও বিক্রি হয়েছে।
নগরীর ৪১নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠের পশুর হাটে বসা ইজারাদাররা জানান, এই বাজারে প্রচুর গরু আমদানি হয়েছে। সব সাইজের গরু মিলছে বাজারে। ২ থেকে ৩ লাখ টাকায় কয়েকটি গরু বিক্রি হয়েছে। বড় ছোট সাইজের প্রচুর গরু বিক্রিও হয়েছে। এই বাজারে গরুর অভাব নেই। বিক্রেতারা বলছেন, কোনো সংকট হবে না। ক্রেতাদের জন্য আরো গরু আমদানি হবে বাজারে।
নগরীতে এবার স্থায়ী অস্থায়ী ১০টি পশুর হাট বসে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায়। অস্থায়ী বাজারগুলো হচ্ছে- কর্ণফুলী পশুর বাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট), ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠ, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, একই ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ এবং ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড়। স্থায়ী হাটগুলো হচ্ছে সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। নগরীর বাজারগুলোতে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুর, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, নাটোরসহ অন্যান্য এলাকা থেকে গরু এনেছেন বেপারিরা। চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাঁশখালী থেকে আনা গরুও আছে। স্থানীয় বিভিন্ন খামারে উৎপাদিৎ প্রচুর গরুও আনা হয়েছে বিক্রির জন্য। এসব গরু কিনতে ক্রেতাদের একটি অংশ বেশ আগ্রহী।
এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর আশপাশের উপজেলাগুলোতে সড়ক পাশে গরুর হাট বসায় যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে লোকজনকে। বিশেষ করে হাটহাজারি, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, পটিয়া, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া উপজেলা সদরে সড়ক পাশে হাটগুলোতে গরুর বাজার জমে উঠেছে। স্থানীয় লোকজন প্রশাসনের প্রতি এসব মৌসুমি অবৈধ হাট অপসারণ করে লোকজনের দুর্ভোগ অবসানের দাবি জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম চেম্বারের আহ্বান : এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন কোরবানি পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আর্থিক নিরাপত্তা বিধান, বাজারকেন্দ্রিক যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চট্টগ্রাম চেম্বার। এক বিবৃতির মাধ্যমে এ আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।
তিনি বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের হাটগুলোতে সমাগম ঘটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিক্রেতা এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার ক্রেতা সাধারণের। তাই পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আর্থিক নিরাপত্তা বিধানকল্পে জাল নোট শনাক্তকরণ যন্ত্র এবং মানি স্কট সুবিধা থাকা উচিত। এ সময় পশুর হাটগুলো রাস্তা বিস্তৃতি লাভ করে। তাই যানজট নিরসন এবং পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা বিধান এবং ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ট্রেন, লঞ্চ ও বাসে অতিরিক্ত যাত্রী বহন থেকে বিরত থাকা এবং দুর্ঘটনা এড়াতে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান মাহবুবুল আলম।
সম্প্রতি ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। তাই ডেঙ্গু রোধে রাস্তাঘাটসহ যত্রতত্র কোরবানির বাজার দ্রুত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং দ্রুত কোরবানির পশুর নাড়িভুড়ি অপসারণ করার জন্য সিটি কর্পোরেশনের প্রতি অনুরোধ জানান চেম্বার সভাপতি। একই সাথে চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে চেম্বার সদস্য, ব্যবসায়ী সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।