দূর প্রান্তে আকাশে গিয়ে মিশেছে মাটি। সে মাটি চিরে চলে গেছে কালো রাস্তা। দেখে যেন মনে হয়, পৃথিবী শেষ হয়েছে ওই রাস্তা বেয়েই। ভূগোলের পরিভাষায় একে বলে দিগন্ত। ভূগোলের ব্যাখ্যা বলে, দিগন্ত রেখায় পৃথিবী শেষ হচ্ছে, এটা মনের ভ্রম। আসলে পৃথিবীর কোনো শেষ নেই, পৃথিবী গোল। কিন্তু ইউরোপের নরওয়েতে এমনই এক রাস্তা দেখা যায় দিগন্তে বিলীন হতে, যা কিনা সত্যিই পৃথিবীর শেষ রাস্তা! ‘ই ৬৯’ হাইওয়ে বলে পরিচিত এই রাস্তা। এখানে একা যাওয়া বারণ। অদ্ভুত রহস্যময় নানা কারণে মোড়া রাস্তাটি তবু অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের আকর্ষণের জায়গা।
১৯৩৪ সালে নরওয়ের এই হাইওয়ে তৈরির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। ১৯৯২ সালে শেষ হয় ১৩০ কিলোমিটার পথ বানানো। নিরক্ষরেখার ওপরের দিকে অবস্থিত এই হাইওয়ে। নরওয়েতে, উত্তর মেরুর গা ঘেঁষে চলে গেছে এই পথ। পথের এক প্রান্তে উত্তর ইউরোপের নর্ডক্যাপ। সেটি গিয়ে সংযুক্ত হয়েছে নরওয়ের ওল্ডারফিউওর্ড গ্রামের সঙ্গে। এই পথের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। পাঁচটি টানেল পেরিয়ে পৌঁছতে হয় এই রাস্তায়। প্রায় ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি টানেলও আছে। রাস্তাটি সমুদ্রতলের চেয়ে প্রায় ২১২ মিটার নিচু। রাস্তার দু’পাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য অপূর্ব সুন্দর।
সমুদ্র এবং বরফের প্রান্ত ছুঁয়ে ছুটে যায় আশ্চর্য রাস্তা। ‘ই ৬৯’-এর অভিনব ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই মূলত কাউকে এখানে একা যেতে দেওয়া হয় না। প্রচণ্ড শীত, বাতাসের দুরন্ত গতি তো রয়েছেই, বরফও পড়তে পারে যখন-তখন। এমনকি গ্রীষ্মকালেও। ঝড়েরও কোনো ঠিকঠিকানা নেই, যেকোনো মুহূর্তে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে যায়। শীতকালে অতিরিক্ত তুষারপাতে রাস্তা বন্ধই হয়ে যায়। এই অপ্রত্যাশিত আবহাওয়ার কারণেই এখানে কাউকে একা যেতে দেওয়া হয় না।