উৎসবমুখর পরিবেশে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে। ১৯২১ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়’। দিবসটি উপলক্ষ্যে ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
কর্মসূচির মধ্যে ছিল পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো, বেলুন উড্ডয়ন, কেক কাটা, থিম সং পরিবেশন, শোভাযাত্রা এবং আলোচনা সভা। গতকাল সকাল ১০টায় টিএসসির পায়রা চত্বরে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহের পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো, বেলুন উড্ডয়ন, থিম সং পরিবেশন এবং কেক কাটার মধ্য দিয়ে দিবসটির কর্মসূচি শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
এর আগে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অ্যালামনাইবৃন্দের অংশগ্রহণে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন। সকাল সাড়ে ১০টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সভায় সভাপতিত্ব করেন।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সুভাষ সিংহ রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমিতি, কারিগরি কর্মচারী সমিতি এবং ৪র্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সবাইকে প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে তিনি প্রতিকূল ও বৈরী পরিবেশে কাজ করার মতো দক্ষতাসম্পন্ন মানবসম্পদ ও স্মার্ট অ্যান্ড্রয়েট তৈরির ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। উপাচার্য বলেন, প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ এবং জ্ঞানভিত্তিক, তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর মানবিক, অসাম্প্রদায়িক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। স্মার্ট গ্রাজুয়েট তৈরিতে পঠন-পাঠন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এরইমধ্যে ‘ডিইউবিডি ভ্যাক’ নামে একটি বায়োসিমিলার কোভিড ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন ভ্যাকসিন উৎপাদন এবং এ সংক্রান্ত উন্নত গবেষণার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অত্যাধুনিক ভ্যাকসিন গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সরকারের সহায়তা কামনা করেন। মূল প্রবন্ধে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল শিক্ষাকে আরো মজবুত ও প্রসারিত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষতাসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরি করতে পারলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে সামাজিক ট্রান্সফরমেশন দরকার। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।