পবিত্র হজ পালন শেষে হাজীদের দেশে ফেরার ফ্লাইট শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার প্রথম দিনে প্রায় দুই হাজার হাজী নিয়ে সাতটি ফ্লাইট দেশের উদ্দেশে সৌদি আরব ছাড়ে। এরমধ্যে গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের প্রথম ফিরতি হজ ফ্লাইট (৭৩৯২) ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় বলে জানা গেছে।
এছাড়া আজ সকাল পর্যন্ত ফ্লাইনাসের আরো তিনটি, সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সের দুটি এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে প্রায় দুই হাজার হাজীর দেশে পৌঁছানোর কথা। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ পোর্টাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এর আগে গত সোমবার ৮ জিলহজ মিনায় অবস্থানের মধ্য দিয়ে হজ কার্যক্রম শুরু হয়, যা মিনায় জামারায় পাথর নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ১২ জিলহজ শুক্রবার। এরপরই দেশে ফেরার প্রস্তুতি শুরু করেন হাজীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, যারা হজ পালনে শেষের দিকে সৌদি আরব পৌঁছেছেন তারা হজ শেষে পবিত্র মক্কা নগরী থেকে এখন মহানবীর রওজা জিয়ারতের জন্য মদিনায় মসজিদে নববীর উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন। মদিনায় কিছুদিন অবস্থান শেষে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবেন তারা। অন্যদিকে যেসব হজযাত্রী প্রথম দিকে সৌদিতে পৌঁছান তারা হজের আগেই মদিনা ঘুরে এসেছেন। তাই এখন তারা প্রথম দিকের ফ্লাইটে দেশে ফিরবেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, রোববার রাতে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফিরতি ফ্লাইট ঢাকার উদ্দেশে সৌদি ছাড়ে। আজ ভোরে ফ্লাইটটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা তাহেরা খন্দকার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সরকারি ব্যবস্থাপনায় যারা হজ করতে গিয়েছিলেন তাদের মধ্য থেকে ৪১৯ জন হাজিকে নিয়ে প্রথম ফ্লাইট রোববার রাতে রওনা করে। আজ ভোর ৬টা ৫ মিনিটে হাজিদের নিয়ে ঢাকায় অবতরণ করবে। হাজীদের ফিরতি ফ্লাইট শেষ হবে আগামী ২ আগস্ট।
এদিকে হাজীদের ফিরতি ফ্লাইটের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে গত শনিবার রাতে মক্কার বাংলাদেশ হজ অফিসে সমন্বয় সভা করা হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) এবং প্রশাসনিক দলের দলনেতা মো. মতিউল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় হজ-পরবর্তী সরকারি এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হাজীদের নির্বিঘ্নে দেশে ফেরার জন্য বিভিন্ন করণীয় বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সভায় অন্যান্যের মধ্যে হজ প্রশাসনিক (প্রথম এবং দ্বিতীয়) দলের সদস্য, কাউন্সিলর (হজ) মো. জহিরুল ইসলাম, চিকিৎসক এবং আইটি দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
হজ অফিসের তথ্যমতে, বিগত বছরে হাজিদের জন্য বোতলজাত জমজমের পানি ফ্লাইটে দিয়ে দেয়া হতো। এবার সে পানি আগে থেকে বহন করে ঢাকায় নিয়ে এসেছে এয়ারলাইন্সগুলো। তাই হাজীদের লাগেজে জমজমের পানি না আনার পরামর্শ দিয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো। হাজীরা ঢাকায় হযরত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর প্রত্যেককে ৫ লিটার করে জমজমের পানির বোতল দেয়া হবে। হজযাত্রীদের পৌঁছে দেয়ার পর ফিরতি ফ্লাইটে জমজমের পানি এনে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মজুত রাখা হয়। চট্টগ্রাম অথবা সিলেট বিমানবন্দরেও একইভাবে জমজমের পানি পাবেন হাজীরা। কোনো হাজী লাগেজে করে জমজমের পানি আনতে চাইলে লাগেজটি সৌদিতেই থেকে যাবে। কিংবা সৌদি বিমানবন্দরে লাগেজ থেকে পানি ফেলে দেয়ার পরই তা বিমানে তুলতে দেবে। একইভাবে অনেকে উট ও দুম্বার কাঁচা মাংস ফ্রোজেন করে আনার চেষ্টা করেন। এটা না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
বিমান জানিয়েছে, চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন সৌদি আরবে গেছেন। এসব হজযাত্রী বহন করতে মোট ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছে ৩২৫টি। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ১৫৯টি ফ্লাইটে ৬১ হাজার ১৮০ জন, সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স ১১৩টি ফ্লাইটে ৪১ হাজার ৪৬৮ জন এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স ৫৩টি ফ্লাইটে ২০ হাজার ২৩৬ জন হজযাত্রী বহন করেছে। একইভাবে হাজীদের দেশে ফেরাতে ফ্লাইট পরিচালনা করবে এয়ারলাইন্সগুলো।
উল্লেখ্য, পবিত্র হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে গিয়ে হজে আগে ও পরে এ পর্যন্ত ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ৪২ জন পুরুষ এবং ১১ জন মহিলা। মক্কায় ৪৫ জন, মদিনায় চারজন, মিনায় দুইজন এবং আরাফাত ময়দানে দুইজনের মৃত্যু হয় বলে মক্কার বাংলাদেশ হজ অফিস সূত্র জানিয়েছে।