ঢাকা ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অন্যরকম

জীবন বাঁচাতে হেঁটে চলে গাছ!

জীবন বাঁচাতে হেঁটে চলে গাছ!

খুব শখ করে বাড়ির এক কোণে ছোট্ট একটি গাছের চারা লাগিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর হঠাৎ করে যদি সেই চারা নিজে থেকেই আপনার জানালার কাছে এসে হাজির হয়? একবার হলেও, এমন ঘটনায় কেঁপে উঠতে বাধ্য আপনি। না, তবে কোনো অলৌকিক ঘটনার কথা হচ্ছে না। কথা হচ্ছে না ‘লর্ড অফ দ্য রিংস’-এর জাদুকরী হিউম্যানয়েড ট্রি নিয়েও। দক্ষিণ আমেরিকার গহিন ক্রান্তীয় অরণ্যে ছড়িয়ে রয়েছে এমনই এক আশ্চর্য উদ্ভিদ প্রজাতি, যারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম। আর এই বিশেষ ক্ষমতার জন্যই সাধারণ মানুষের কাছে এই উদ্ভিদ প্রজাতি পরিচিত ‘ওয়াকিং পাম’ নামে। অবশ্য বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই উদ্ভিদ প্রজাতির নাম ‘সক্রেটিয়া এক্সোরিজা’ বা ‘ক্যাশাপোনা’। ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটো থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সুমাকো বায়োস্ফিয়ার। মূলত এই বায়োস্ফিয়ারেই বাস ক্যাশাপোনা পাম গাছের। সত্তরের দশকের শুরুর দিকে এই সংরক্ষিত অরণ্যে গবেষণা করতে গিয়ে আশ্চর্য এই উদ্ভিদ প্রজাতির সন্ধান পান স্লোভাক ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেসের গবেষক পিটার ভ্রানস্কি। শুধু এই উদ্ভিদ প্রজাতিই নয়, সঙ্গে ব্যাঙ, আরশোলাসহ একাধিক নতুন প্রাণী প্রজাতিরও আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। ভ্রানস্কি সে সময় দাবি করেন, তার আবিষ্কৃত এই নতুন উদ্ভিদটি স্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম। অবশ্য তার এই দাবিকে সে সময় সাদরে গ্রহণ করেনি বিজ্ঞানীমহল। ১৯৮০’র দশকে ইকুয়েডরের এই আমাজনিয়ান অরণ্যে পুনরায় একটি অভিযান চালান জীববিজ্ঞানী জন এইচ বোদলে। তিনিই দীর্ঘদিন এই অরণ্যে অবস্থান করে পর্যবেক্ষণ করেন এই বিশেষ গাছের গতিবিধি এবং তাদের জীবনপদ্ধতি। বোদলের নেপথ্যেই সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে গৃহীত হয় চলমান উদ্ভিদের অস্তিত্বের কথা। কীভাবে অবস্থান পরিবর্তন করে এই উদ্ভিদ? সাধারণভাবে ১৮-২০ মিটার বা ৬০-৭০ ফুট লম্বা হতে পারে এই উদ্ভিদ। অন্যদিকে গাছের মূল কাণ্ড ধীরে ধীরে সরে যায় তার মূল অবস্থান থেকে। এভাবেই প্রতিদিন অল্প অল্প করে স্থান পরিবর্তন করে এই গাছ। পরিসংখ্যান ও গবেষণা বলছে প্রতিদিন দেড় থেকে দু সেন্টিমিটার সরণ হয় সেই গাছের। কখনো আবার দিনে ৩ সেন্টিমিটার পর্যন্তও অবস্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম ওয়াকিং পাম। বছরের হিসাবে এই দূরত্ব কম নয় মোটেই। সাধারণত নিজের অবস্থান ২০ মিটার পর্যন্ত সরে যায় এই

গাছ। সবমিলিয়ে এই অরণ্য যেন আক্ষরিক অর্থেই জীববিজ্ঞানের এক আশ্চর্য জাদুঘর।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত