ঢাকা ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ৩১ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আধুনিক চিলমারী বন্দরের অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ

আধুনিক চিলমারী বন্দরের অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ

লোকগীতি সম্রাট মরহুম আব্বাস উদ্দিন আহমেদের গাওয়া কালজয়ী ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারী বন্দরে রে’- গানটি অবিভক্ত বাংলার অতিপ্রাচীন চিলমারী নৌবন্দরটিকে বিখ্যাত করেছে। ব্রিটিশ শাসনামলে চিলমারী বন্দরটি বাণিজ্যিক গুরুত্ব বহন করত। তখন কলকাতা থেকে চিলমারী হয়ে দুটি জাহাজ যাত্রী ও পণ্য নিয়ে আসামের ডিব্রুগড় ও গৌহাটি যাতায়াত করত। ১৫৮০ সালে প্রাচীন নৌবন্দরটি সর্ব প্রথম ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। যুগের পর যুগ ধরে করালগ্রাসী ব্রহ্মপুত্র নদ দেশের অন্যতম প্রাচীন নৌবন্দর চিলমারীকে গ্রাস করে চলছিল। ফলে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে হাজার হাজার মানুষ তাদের বাস্তভিটা হারায়। কোনো কোনো পরিবার নিঃস্ব হয়ে পথের ভিখারি হয়েছে। বর্তমানে চিলমারী উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টি ইউনিয়ন পুরোপুরি ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে বিলীন। বাকি তিনটি ইউনিয়নের অর্ধেকেরও বেশি অংশ ব্রহ্মপুত্র নদ গ্রাস করে ক্রমাগত চিলমারীর শেষ অংশটুকু গিলে খাওয়ার পথে এগোচ্ছিল। ১৯৯৩ সালের ১৭ জুলাই ‘চিলমারী বন্দর নদীভাঙন প্রতিরোধ আন্দোলন’ নামক একটি সংগঠনের ব্যানারে নদী প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা চিলমারী থেকে পায়ে হেঁটে কুড়িগ্রাম গিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। তারা ডিসি অফিসের সামনে অবস্থান নেন। ফলে আন্দোলনকারীদের দাবি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দৃষ্টিতে আসে। দীর্ঘ দেড় যুগ আন্দোলনের পর সফলতাও আসে। অবশেষে ২০০৭-০৮ অর্থবছরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পঞ্চম বৈঠকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার বৈরাগীর হাট ও চিলমারী বন্দর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষা ফেজ-১ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ডান তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্প ফেজ-১-এর কাজ শুরু করা হয়। ৯৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে আড়াই কিলোমিটার অংশের কাজ ২০০৯ সালের জুন মাসে শেষ হয়। এরপর থেকে ফেজ-২, ফেজ-৩ প্রকল্পের আওতায় প্রকল্পের কাজ ২০১৭ সালে গিয়ে শেষ হয়। ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে চিলমারীবাসীর স্বপ্ন ও প্রাণের দাবি পূরণ হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবার পর চিলমারী উপজেলার যৎসামান্য অংশ রক্ষা পেয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রে চিলমারী নামের একটি উপজেলার অস্তিত্ব এখন দৃশ্যমান। ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত চিলমারী উপজেলার থানাহাট এ,ইউ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চিলমারীতে ইউনিয়ন পর্যায়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে কার্ডের মাধ্যমে ১০ টাকা কেজিতে চাল বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করতে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে নৌবন্দরের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর চিলমারীর মানুষ আবারও নতুন করে এই প্রাচীন বন্দরটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন চিলমারী নদীবন্দরটি বাংলাদেশ সরকারের গেজেট নোটিফিকেশন নং-এস,আর ও নং-৩৬৮-আইন/২০১৬. তারিখ : ০৮-১২-২০১৬-এর মাধ্যমে নদীবন্দর হিসাবে ঘোষণা করা হয়। উত্তরবঙ্গের জনসাধারণের নৌপথে সেবার মান বৃদ্ধির স্বার্থে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক চিলমারী নদীবন্দরের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের জন্য একনেকের সভায় চিলমারী এলাকায় চিলমারী নদীবন্দর নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য ২৩৫.৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই ঘোষণার পর ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও আধুনিক চিলমারী নৌবন্দর নির্মাণে দৃশ্যমান কিছু চোখে না পরিলক্ষিত হওয়ায় চিলমারীর সাধারণ মানুষের মাঝে এখন একটাই প্রশ্ন আদৌ আধুনিক চিলমারী নৌবন্দর কি গড়ে উঠবে? এ ব্যাপারে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, বিআইডব্লিউটিএ-এর পক্ষ থেকে রোয়েদাদ প্রস্তুতের কাজ চলছে। এটা হয়ে গেলে এবং অধিগ্রহণকৃত জমির সরকারি মূল্য নির্ধারণ হলে জমি অধিগ্রহণের টাকা চাওয়া হবে। টাকা পেলেই জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে নৌবন্দরের জন্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত