অন্যরকম
বিশ্বস্ত কুকুরকে স্মরণ করবে জাপান
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
প্রাণের চেয়ে প্রিয় মনিবের মৃত্যু হলেও সেটা বোঝার মতো ক্ষমতা নেই তার। মনিবের ফেরার অপেক্ষায় ছিল টানা ৯ বছর ৯ মাস ১৫ দিন। প্রভুভক্তির নজির গড়ে বিশ্বজুড়ে নজর কেড়েছিল হাচিকো। গত শতাব্দীর এই জাপানি কুকুরকে নিয়ে তৈরি হয়েছে কতই না গল্প-উপন্যাস-সিনেমা-ওয়েব সিরিজ। সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও অনুগত কুকুর হিসেবে ইতিহাসের পাতায় এরই মধ্যে নাম উঠেছে হাচিকোর। চলতি বছর তার জন্ম শতবর্ষ পালন করবে জাপান। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার। ১৯২৩ সালের নভেম্বরে জাপানের ওদাতে শহরে জন্ম হয় হাচিকোর।
আকিতা প্রজাতির আকারে যথেষ্ট বড় এই কুকুরটির গায়ের রং ছিল বাদামি। জন্মের ঠিক পরের বছরই হাচিকোকে পোষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের অধ্যাপক হিদেসাবুরে উয়েনো। ওই সময় আকিতা প্রজাতির কুকুরকে সরকারের তরফে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। ফলে প্রতিদিন শিবুয়া স্টেশনে প্রিয় পোষ্যের সঙ্গে দেখা করতেন অধ্যাপক উয়েনো। ১৯২৫-এ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কিছু দিনের মধ্যেই মৃত্যু হয় টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই অধ্যাপকের। অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই শিবুয়া স্টেশনে আর আসতেন না উয়েনো। কিন্তু যে সময় আদরের পোষ্যের সঙ্গে দেখা করতেন তিনি, ঠিক সেই সময় স্টেশনে গিয়ে তার অপেক্ষা করত হাচিকো।
এক-দুই দিন নয়। পরবর্তী প্রায় ১০ বছর এভাবেই মালিকের জন্য অপেক্ষা করেছে সে। প্রথম প্রথম অবশ্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি কেউ। কিন্তু রোজ একই জায়গায় কুকুরটিকে আসতে দেখে টনক নড়ে রেল কর্তৃপক্ষের। হাচিকোর প্রভুভক্তি দেখে রীতিমতো চমকে যান তারা। ১৯৩২ সালে জাপানি পত্রিকা ‘আসাহি শিম্বুন’-এ প্রথমবার প্রকাশিত হয় হাচিকোর কাহিনি। রাতারাতি গোটা বিশ্বে বিখ্যাত হয়ে যায় প্রভুভক্ত এই জাপানি কুকুর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর চার বছর আগে অর্থাৎ ১৯৩৫ সালের ৮ মার্চ মৃত্যু হয় হাচিকোর। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কুকুর প্রতিপালনের কোবায়াশি হোমে থাকত সে।
হাচিকোর মৃত্যুর পর শিবুয়া স্টেশনে তৈরি হয় তার ব্রোঞ্জের মূর্তি। তার প্রভুভক্তির গল্প স্থান পেয়েছে জাপানি স্কুলের পাঠ্যে। ১৯৮৭ সালে প্রথমবার জাপানি ভাষায় মুক্তি পায় কুকুরটিকে নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্র। ২০০৯ সালে আসে ‘হাচিকো : আ ডগস টেল’। চীনা ভাষায়ও কুকুরটিকে নিয়ে ছবি তৈরি করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতারা।