ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

নার্সারি করে লেবু মিয়ার জাতীয় পুরস্কার লাভ

নার্সারি করে লেবু মিয়ার জাতীয় পুরস্কার লাভ

নীলফামারী সদর উপজেলার কচুকাটা এলাকার মো. লেবু মিয়া। ছিলেন মাছ ব্যবসায়ী। মাছ বিক্রির টাকা দিয়েই চলত তার সংসার। অভাবের সংসারে বাড়তি আয়ের আশায় অনেক কষ্টে কিছু টাকা জমিয়ে ২০০১ সালে এক বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন এ আর মামুন নামের একটি নার্সারি। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি লেবু মিয়াকে। দীর্ঘ ২১ বছরে লেবু মিয়ার ১ বিঘার নার্সারির পরিধি বেড়ে এখন ৫০ বিঘা। নার্সারিতে সৃষ্টি করেছেন ১৫টি পরিবারের ৩১ জন নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান। বৃক্ষরোপণে অসামান্য অবদান রাখায় পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার। এ আর মামুন নার্সারিতে দেখা যায়, আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, পোয়ারা, মালটা, কমলা, নারকেল, সুপারিসহ দেশি-বিদেশি প্রায় ১ হাজার প্রজাতির চারা আছে। আছে ভীমরাজ, তুরুদ চন্ডান, কাঁটামুকুটসহ প্রায় ৬০ প্রজাতির ঔষুধি গাছ। দুধরাজ, হাড়জোরা স্বর্ণ চাপাসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় গাছের চারা আছে সেখানে। সব মিলিয়ে প্রায় ১২ লাখ চারা মজুদ আছে লেবু মিয়ার নার্সারিতে। ২০১৪ সাল থেকে টানা ৭ বার জেলা বৃক্ষমেলায় প্রথম স্থান ধরে রেখেছেন। ২০২২ সালে জাতীয় পর্যায়ে বৃক্ষমেলায় ১ম স্থান অধিকার করেন। এর আগে বৃক্ষরোপণে অসামান্য অবদান রাখায় জাতীয় পুরস্কার ২০২১ লাভ করেছিলেন তিনি। তার এ প্রাপ্তিকে কাজে লাগিয়ে আর্থসামাজিক উন্নতির পাশাপাশি বেকার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করতে চান লেবু মিয়া। লেবু মিয়ার নার্সারির কর্মচারী স্বপন চন্দ্র বলেন, ‘আমি ৩ বছর ধরে এখানে কাজ করি। এখানকার উপার্জিত টাকা দিয়েই আমার পড়াশোনা চলে। পাশাপাশি বাবা-মাকে সাহায্য করি।’ জরিনা বেগম নামের এক ৫০-এর ঊর্ধ্বে নারী শ্রমিক বলেন, ‘৭ বছর ধরে কাজ করি। যা পাই ভালোই চলে। কাজের চাপও কম।’ মুক্তা আক্তার নামের আরেক শ্রমিক বলেন, ‘এখানে কাজ করে ভালোই চলছি। স্বামীর পাশাপাশি আমিও স্বাবলম্বী। আমাদের নার্সারিতে মানুষের চাহিদাও বেশি। তারা আসেন, গাছ কেনেন। সব মিলিয়ে ভালোই যাচ্ছে।’ নার্সারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ আর মামুন বলেন, ‘আমরা শুরুতে ১ বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুধু নিম গাছের চারা রোপণ করি। সেই চারাগুলো বন বিভাগ কিনে নেয় রাস্তায় লাগানোর জন্য। সেই থেকে যাত্রা শুরু। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। পরে ফলদ, ঔষুধি গাছসহ বিদেশ থেকে বিভিন্ন গাছের বীজ বা চারা এনে প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করছি। বাবা লেবু মিয়া জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন। এ পুরস্কার আমাদের আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।’ নার্সারির প্রতিষ্ঠাতা মো. লেবু মিয়া বলেন, ‘এ পর্যন্ত আসার পেছনে কষ্ট অনেক। আগে মাছের ব্যবসা করতাম। একটি ট্রেনিং পেয়েছিলাম ৯০ দশকে। সেখান থেকে কৃষি বিভাগের একটি ভ্রাম্যমাণ দলের কাছে নার্সারি ও চারা উৎপাদন করে টাকা আয়ের বিষয়টি জানতে পেরে ২০০১ সালে শুরু করি। নার্সারি আমাকে এ স্থানে পৌঁছে দেবে কল্পনাও করতে পারিনি। মানুষ আমার কাছে চারা নিতে আসে। দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের নার্সারিতে আমার চারা যাচ্ছে ট্রাকে করে।’ তিনি বলেন, ‘গাছ লাগানোয় মানুষকে বেশি বেশি উদ্বুদ্ধ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করতে চাই। সেই সঙ্গে পরিবেশ রক্ষায় নার্সারি গড়ে তোলা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মানুষের মাঝে বার্তা ছড়াতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পুরস্কার এ কাজে আমাকে সাহায্য করবে।’ জেলা সামগ্রিক বনায়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রেজাউল করীম বলেন, ‘বন বিভাগ শুরু থেকেই লেবু মিয়ার নার্সারিতে পরামর্শ দিচ্ছে। লেবু মিয়ার চেষ্টা ও পরিশ্রম জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। এটি সত্যিই আনন্দের ও গর্বের।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত