একটি বই! অনেকেই খুঁজছে! শুনতে যতই ধাঁধার মতো মনে হোক, অভিশপ্ত ‘নেক্রোনমিকন’ মহাগ্রন্থটি এমনই কুয়াশা ছড়িয়ে রেখেছে বিশ্বজুড়ে। প্রায় ১০০ বছর হতে চলল, বহু মানুষই বুক ফাটিয়ে বলে চলেছেন, ‘আছে, আছে, সব আছে, সব সত্যি!’ কিন্তু আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি বইটি। পাওয়ার কথাও নয় বোধহয়। এই বই যে স্বপ্নে পেয়েছিলেন এইচপি লাভক্র্যাফট। সর্বকালের অন্যতম সেরা মার্কিন এই লেখক সেখান থেকেই একে আমদানি করেছিলেন তার লেখায়। চর্মচক্ষে এই বইটি কেউই দেখেননি। মনে হতেই পারে কেন বহু মানুষ খুঁজছেন বইটি? কী আছে তাতে? একটু খোলসা করা যাক। আসলে এ এমন এক বই, যেখানে মৃত শরীরে প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার কৌশল বলা রয়েছে। আবার পৃথিবীর দুর্গম কোণে ঘুমিয়ে পড়া কবেকার অতিকায় সব মহাদানবদের জাগিয়ে তোলার মন্ত্রও সেখানে আছে। আছে এমনই আরো সব অতিপ্রাকৃত কৃৎকৌশল, যা একবার জেনে ফেললে সব কিছুই চলে আসবে হাতের মুঠোয়। বইটি বাঁধানো মানুষের চামড়ায়। পাতাগুলোতে যে অক্ষরসজ্জা, তা রক্তে লিখিত! হ্যাঁ, আপনিও কিন্তু নেক্রোনমিকনের কথা জানেন। বিখ্যাত হলিউডি ভুতুড়ে ছবি ‘ইভিল ডেড’ দেখেছেন নিশ্চয়ই। পরে যার আরো বহু সিক্যুয়েলও মুক্তি পেয়েছে। যে বইয়ের বিভিন্ন অংশ পড়তে গিয়ে অজান্তেই অন্ধকার দুনিয়ার ভয়ংকর শক্তিদের জাগিয়ে ফেলেছিল কয়েকজন কলেজপড়ুয়া তরুণ-তরুণী। রাতারাতি তাদের জীবন কেমন নরক গুলজার হয়ে উঠেছিল তা সবাই জানেন। যাই হোক, এই বইটিই আসলে নেক্রোনমিকন। যা নাকি পুরোটা একসঙ্গে নেই। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এর বিভিন্ন টুকরো। সব কয়েকটি টুকরো একসঙ্গে জুড়তে পারলে যে বিপুল শক্তির অধিকারী হওয়া যাবে, তা বলাইবাহুল্য। কিন্তু সেই কাজটি কঠিন। ১৯২২ সালে লাভক্র্যাফট লিখেছিলেন ‘দ্য হাউন্ড’। থরথরিয়ে কেঁপে ওঠার মতো গল্প। বছর দুয়েক পরে ১৯২৪ সালে প্রথমবার ছাপার অক্ষরে উল্লিখিত হয় ‘নেক্রোনমিকনে’র কথা। তবে বইটা যে আছে, এই ধারণা জমাট বাঁধে ‘সাইমন নেক্রোনমিকন’ বা ওই ধরনের আরও বেশ কিছু বই থেকে। যেগুলোকে দাবি করা হয়েছিল ‘সত্যি’ নেক্রোনমিকন বলে। সেখানে নাকি ব্যাবিলনীয় ও সুমেরীয় ‘টেক্সটে’ লেখা আছে বিশ্বকে হাতের মুঠোয় পাওয়ার মন্ত্র! এমনকি, হিটলারের উত্থানের সময় বলা হতে থাকে নাৎসি বাহিনীর সর্বাধিনায়কের প্রতিপত্তির মূলে রয়েছে ‘নেক্রোনমিকন’! ততদিনে অকালমৃত্যু হয়েছে লাভক্র্যাফটের। কিন্তু না থেকেও তিনি প্রবলভাবে থেকে গেলেন। লাভক্র্যাফটের মৃত্যুর পর কেটে গিয়েছে প্রায় ৯ দশক। কিন্তু তার কলমের ডগা থেকে সৃষ্টি হওয়া এক মহাগ্রন্থের জলছাপ এভাবেই তৈরি করে রেখেছে আলোড়ন।