কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে ডাকাত দলের কাছে অস্ত্র ভাড়াদানকারি চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১৫ এর সদস্যরা। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র, বিপুল পরিমাণ কার্তুজ, সেনাবাহিনীর নকল পোশাক, অত্যাধুনিক বাইনোকুলার ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র।
গতকাল শনিবার বিকাল ৩টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন চকরিয়া উপজেলার নলবনিয়া গ্রামের মৃত সিদ্দিকের ছেলে খায়রুল আমিন (৪৩), ঈদগাঁও উপজেলার মধ্যম শিয়াপাড়ার মৃত আব্দুস ছাত্তারের ছেলে মাহাবুব তৈয়ব (৬৪), বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজ নগর এলাকার মৃত নজরুল মিয়ার ছেলে নূর ইসলাম (৫০), চকরিয়ার দরগাহ পাড়ার মৃত আব্দুল মোতালিবের ছেলে মো. আব্দুল হাসিম (৩৫), একই উপজেলার দক্ষিণ মেধা কচ্ছপিয়া এলাকার মৃত আব্দুর শুক্কুরের ছেলে জুলফিকার আলী ভুট্টো (৪৮), পূর্ব হাজীপাড়ার মো. হোসেনের ছেলে মো. সেলিম (২৮) ও গর্জনতলী গ্রামের মো. হোসেনের ছেলে শাহাব উদ্দিন (৩২)।
এ সময় তাদের আস্তানায় তল্লাশী করে দুটি ওয়ান শুটার এক নলাবন্দুক, একটি ওয়ান শুটার কাটা রাইফেল, একটি ওয়ান শুটার রাইফেল (এলজি), একটি এয়ার রাইফেল/গান, দুটি রাউন্ড মেশিনগানের (এমজি) বুলেট, ১০ রাউন্ড রাইফেলের বুলেট, ১১ রাউন্ড ১২ বোর কার্তুজ, ৮৯ রাউন্ড এয়ার রাইফেল বল, একটি বড় রামদা, এক সেট সেনাবাহিনীর নকল পোশাক, একটি বাইনোকুলার, আটটি মোবাইল ফোন এবং ১০টি সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়। র্যাব কর্মকর্তা মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান, কক্সবাজারের চকরিয়া ও মহেশখালী উপজেলার উপকূলবর্তী বিভিন্ন এলাকায় সশস্ত্র ডাকাত দলের নিয়মিত তৎপরতা খবর পাওয়া যায়, যার প্রেক্ষিতে সশস্ত্র ডাকাত দলের সাথে জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রচেষ্টার পাশাপাশি তাদের অস্ত্রের উৎস খুঁজে বের করতে অনুসন্ধানে নামে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১৫ জানতে পারে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার স্থল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম ছিলখালির ঘরবসতিহীন সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় অবস্থান করে একটি চক্র টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ডাকাত দলের নিকট আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, দেশীয় অস্ত্রসহ ডাকাতিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী নিয়মিত ভাড়া দিয়ে থাকে। আরো জানা যায়, এক ঘন্টার পায়ে হাটা পথ ছাড়া সেখানে যাওয়ার আর কোনো স্থলপথ নেই। আশপাশে ১/২ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অপরিচিত কোনো মানুষ ঢুকলেই ডাকাতদের নিযুক্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমে তাদের কাছে তথ্য চলে যায় এবং তখন তারা গা-ঢাকা দিয়ে দেয়। আবু সালাম চৌধুরী আরো জানান, ওই সব তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১৫ এর একটি দল চক্রটিকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে গত শুক্রবার মধ্যরাতে লবণের বড় নৌকার পাটাতনে লুকিয়ে সেই আস্তানার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। একপর্যায়ে সংযুক্ত একটি ছোট খালের মাধ্যমে আস্তানার একেবারে নিকটবর্তী হয়ে কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই র্যাবের আভিযানিক দল নৌকা থেকে নেমে সেখানে অতর্কিত অভিযান শুরু করে।
উপস্থিত দুষ্কৃতকারিরা সশস্ত্র অবস্থায় থাকলেও পরিস্থিতির আকস্মিকতায় ও র্যাব সদস্যদের এরূপ কৌশলী অবস্থানের কারণে গুলি ছোড়ার কোনো সুযোগ পায়নি। এ সময় চক্রটির অস্ত্রধারী সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র্যাব। র্যাব কর্মকর্তা মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার চক্রটির সদস্যরা জানায়, তারা আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইউনিফর্মের আদলে তৈরি নকল ইউনিফর্ম, দেশীয় অস্ত্র এবং অন্যান্য সামগ্রী মূলত বিভিন্ন ডাকাত দলের নিকট বিক্রয় এবং ক্ষেত্রবিশেষ ভাড়ায় প্রদান করে থাকে। এছাড়া উদ্ধারকৃত মোবাইল ও সিম ব্যবহার করে ক্রেতা ও ভাড়াগ্রহণকারীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে।
উদ্ধারকৃত অস্ত্র, গোলাবারুদ, আলামতসহ গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থার জন্য কক্সবাজারের চকরিয়া থানায় লিখিত এজাহার দাখিল করা হয়েছে বলেও জানান র্যাব কর্মকর্তা মো. আবু সালাম চৌধুরী।