দক্ষিণ এশিয়ার সর্বাধুনিক স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট হচ্ছে রাজধানীর ঢাকায়। নগরবাসীকে শতভাগ উন্নত ও টেকসই পয়ঃসেবার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে ঢাকা ওয়াসার। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে ঢাকা মহানগরীতে পাঁচটি আধুনিক স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করছে সংস্থাটি। এছাড়াও রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোকে দূষণের হাত থেকে রক্ষায় ভূমিকা রাখবে এসব প্লান্ট। প্লান্টগুলোকে পরিবেশবান্ধব ও জনবান্ধব হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, চীনা অর্থায়নে এরইমধ্যে রাজধানীর আফতাবনগর সংলগ্ন দাশেরকান্দি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজ সম্পন্ন করেছে ঢাকা ওয়াসা। আগামীকাল প্লান্টটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকার নাগরিকদের আধুনিক ও নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের (ডিএসআইপি) আওতায় আরো চারটি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে ঢাকা ওয়াসা। দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের পূর্বে ঢাকার একমাত্র পয়ঃশোধনাগার ছিল পাগলা পয়ঃশোধনাগার। পয়ঃশোধনাগারটি ১৯৭৮ সালে নির্মিত হয়। পরবর্তীতে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে এটি পুনঃসংস্কার করা হয়। পাগলা পয়ঃশোধনাগার আধুনিক ও বর্ধিত করার কার্যক্রমও শুরু করতে যাচ্ছে ঢাকা ওয়াসা। এরইমধ্যে আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা পুনর্নির্মাণের জন্য ডিএসআইপি প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার। দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার দৈনিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন পয়ঃশোধন প্রক্রিয়ার ক্ষমতা রয়েছে। যা রাজধানীর মোট পয়ঃশোধনের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে প্রায় এক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
দাশেরকান্দি শোধানাগার প্লান্টে খিলগাঁও থানার অন্তর্গত, আফতাবনগর সংলগ্ন এবং গুলশান (একাংশ), বনানী, তেজগাঁও, নিকেতন, মগবাজার, মালিবাগ, আফতাবনগর, বাড্ডা, কলাবাগান, পান্থপথ, ধানমন্ডি (একাংশ) ও হাতিরঝিলসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার পয়ঃশোধনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চীনের অর্থায়নে ৩, ৪৮২.৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৬২.২ একর জমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। এই অর্থের ১, ১০৬.৪২ কোটি টাকা জিওবি তহবিল থেকে এবং ১০ কোটি টাকা ওয়াসার তহবিল থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। প্রকল্পটির বাকি ২, ৩৬৬ কোটি টাকা এই ব্যাংক থেকে সহায়তা হিসাবে আসবে।
প্রকল্পটিতে প্রতিদিন প্রায় ৫৬০ টন প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতাসহ একটি সøাজ ড্রাইং-বার্নিং সিস্টেম রয়েছে। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ১ আগস্ট। পাওয়ার চায়নার অধীনে চেংডু ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন দ্বারা ডিজাইন ও নির্মিত প্রকল্পটি এক বছরের অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ওয়াসার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঢাকার চারপাশে নদী দূষণ রোধে পাঁচটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণের জন্য ২০১৩ সালে ওয়াসার মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে দশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্লান্টটি নির্মিত হয়েছিল।
প্রকল্প অনুযায়ী, প্রগতি সরণিতে রামপুরা সেতুর পশ্চিম পাশে একটি বর্জ্য উত্তোলন স্টেশন, রামপুরা থেকে আফতাবনগর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার ট্রাঙ্ক স্যুয়ার লাইন এবং দশেরকান্দিতে মূল শোধনাগার নির্মাণ করা হচ্ছে।
গতকাল রাজধানীর আফতাবনগরে প্লান্ট সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথোরিটির (ওয়াসা) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। তিনি বলেন, আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী দশেরকান্দি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। দেশে এটাই প্রথম আধুনিক প্লান্ট।
ঢাকা ওয়াসার প্রধান নির্বাহী আরো বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকার শতভাগ পয়ঃশোধন প্রক্রিয়ার মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী পাগলা, উত্তরা, রায়েরবাজার ও মিরপুর এলাকায় একটি করে আরো চারটি পয়ঃশোধন কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
প্লান্টটি ২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এসডিজি লক্ষ্য-৬ বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। এ ধরনের একক পয়ঃশোধনাগার প্লান্ট দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহত্তম এবং এটিই সেরা। তিনি বলেন, নর্দমা থেকে পরিশোধিত পানি বালু নদীর পানিতে পড়ছে- যা নদীর পানির গুণগতমান বাড়ানোর পাশাপাশি পানি সুপেয় করে তোলে।
পাগলা স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং রায়েরবাজারের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসার প্রধান নির্বাহী বলেন, সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্লাই অ্যাশ, পয়ঃশোধনের উপজাত, সিমেন্ট কারখানার কাছে বিক্রি করা হবে। পরে তাদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। বাংলাদেশকে ডিজিটাল করতে সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঢাকা ওয়াসা তাদের কার্যক্রমের ৭০ শতাংশ ডিজিটালাইজড করেছে।