ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ

থানা-ওয়ার্ড কমিটির প্রস্তাবিত তালিকায় ‘বিতর্কিতদের’ নাম

থানা-ওয়ার্ড কমিটির প্রস্তাবিত তালিকায় ‘বিতর্কিতদের’ নাম

আওয়ামী লীগের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক এলাকা ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। বিরোধীদলীয় আন্দোলন সংগ্রাম মোকাবিলা ও দলের বৃহত্তর কর্মসূচি বাস্তবায়নে ঢাকা মহানগর সবচাইতে বেশি ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের থানা ওয়ার্ডে ‘শক্তিশালী’ কমিটি গঠনের তাগিদ রয়েছে দলীয় হাইকমান্ড থেকে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একাধিকবার কমিটি প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি অবিলম্বে কমিটি দিতে না পারলে দলীয় হাইকমান্ড থেকে সাংগঠনিক রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। এমন বাস্তবতায় তোড়জোড় করে কমিটি জমা দিয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে আরো আগেই কমিটি জমা দিয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ।

কমিটি গঠনে মহানগরের দুই শাখায় দুই রকম প্রস্তুতি থাকলেও অভিযোগের পাল্লা একই। দুই শাখাতেই ত্যাগী নেতাদের তুলনায় ‘বিতর্কিতরাই’ বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। কোথাও কোথাও মাইম্যান তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে আবার কোথাও কমিটি বাণিজ্যের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দলীয় হাইকমান্ড থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদ না দেওয়ার বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এই কমিটি গঠনে সে নির্দেশনাও উপেক্ষিত হয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে অর্থাৎ তথ্য-প্রমাণসহ এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন দলীয় হাইকমান্ড বরাবর চিঠিও দিয়েছেন। মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই কমিটি সংশোধন না করে ঘোষণা করা হলে তথ্য প্রমাণ নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিক্ষোভ করবেন কমিটি থেকে বাদ পড়া ত্যাগী নেতারা।

তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণীয় পর্যায়ের ভাষ্য- সামনে নির্বাচন। কমিটি বাণিজ্য দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে। সাংগঠনিক ভিত দুর্বল করে দেয়। নির্বাচন সামনে রেখে এমন গুরুতর অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে উঠবে তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অভিযোগ উঠেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগে মামলার আসামি, বিএনপিপন্থি, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশ মঞ্চ ভাঙচুরকারী ও দখলদারদের থানা ও ওয়ার্ড কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে ঢাকা সিটি উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে বিএনপি নেতাদের সাথে গিয়ে নির্বাচনি প্রচারণা চালায় হানিফ আলী হানিফ। এই হানিফের বাসায় জিয়াউর রহমানের জন্মদিন পালন করার একটি ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। বিএনপি নেতা হানিফের ভাই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের খসড়া কমিটিতে আছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া হানিফের ভাই সাবের প্রবাস জীবন থেকে ফিরেই ৫৪নং ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে যাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। আরেক বিতর্কিত নেতার নাম নুরুল ইসলাম মোল্লা সুরুজ। ঢাকা মহানগর উত্তরের কয়েকজন নেতা জানান, গত রমজান মাসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সাবেক এমপি খালেকুজ্জামান খালেককে সাথে নিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জামানের বাড়িতে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে ইফতার আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন নুরুল ইসলাম মোল্লা সুরুজ। এই সুরুজের ছত্রছায়ায় ৫২নং ওয়ার্ডে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে যাচ্ছেন সোহেল। সোহেলের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও জমি দখলসহ মামলা আছে ৬টা। তার দাদা ছিলেন শান্তি কমিটির সদস্য এবং বাবা বিএনপির রাজনীতি করেন এবং মা জামায়াতের সঙ্গে আছেন। ৪৬নং ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত তালিকায় আছেন শিপনের নাম। তিনি হত্যা মামলার আসামি। ৫১নং ওয়ার্ডে আছে আরেফিন সিদ্দিকীর নাম। তিনি যুবদল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসেছেন। স্থানীয় রাজনীতিতে তার কোনো অবস্থান নেই।

এছাড়া ১৯৯৪ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে খিলক্ষেত রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জনসভায় হামলাকারী রফিকুল ইসলাম ও শাহীনুর ইসলাম শাহীনের নামও রয়েছে নতুন কমিটির খসড়া তালিকায়। যদিও রফিক ও শহীনের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে দলের তিনজন নেতা অভিযোগপত্র দিয়েছেন। রফিক ও শাহীনের বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখল করে বাড়ি করারও অভিযোগ আছে।

এছাড়া বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত সফিউদ্দিন মোল্লা পনুর নামও রয়েছে এই কমিটিতে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি পুলিশের সাবেক উপকমিশনার ওবায়দুর রহমান খাননের বোন জামাই তিনি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে জমি দখল, মামলার আসামিসহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। দক্ষিণ খান থানায় পদ পেতে যাচ্ছেন একেএম মাসুদুজ্জামান মিঠু। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বরাবর চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এতে তার বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্য, দলের সাংগঠনিক কাজ থেকে বিরত থাকা, অস্ত্র দিয়ে নেতাকর্মীদের কাছে ভয়ভীতি তৈরি করে ক্ষমতার রাজনীতি করার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সম্পাদক পর্যায়ের এক নেতা বলেন, ত্যাগী নেতারা অর্থ দিতে রাজি না হওয়ায় তারা বাদ পড়ছেন। একের পর এক অভিযোগ দিলেও মহানগরের শীর্ষ নেতারা তা কর্ণপাত করেননি।

এদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আওতাধীন থানা ও ওয়ার্ডে বিতর্কিত ব্যক্তিরা নেতৃত্বে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব থানা ও ওয়ার্ডের সম্মেলন হলেও দীর্ঘদিন ধরে কমিটি দেওয়া হয়নি। তবে সম্প্রতি কমিটি দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। মতিঝিল-পল্টনের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আওয়ামী লীগের কমিটিতে জায়গা পাচ্ছে বিতর্কিতরা। প্রস্তাবিত কমিটি থেকে জানা গেছে, অধিকাংশ এলাকায় আসছে বিতর্কিত মুখ। ত্যাগীদের সংগঠনে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। দক্ষিণ বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানায় প্রস্তাবিত কমিটিতে রাখা হয়েছে বিতকির্ত, চাঁদাবাজ ও মামলার আসামি। এছাড়া কমিটিতে স্থানীয় কাউন্সিলরদের প্রধান্য দেওয়া হয়েছে। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, শাহবাগ থানার ২০নং ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটিতে সভাপতি পদের মকবুল হোসেনে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি কাউন্সিলর আসাদের সমর্থক বলে জানা গেছে। তিনি আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে সক্রিয় নয় বলে নেতাকর্মীর অভিযোগ। আর একই ওয়ার্ডে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রস্তার করা হয়ে শাওন নামে একজনকে, তার নামে নানা নিয়মের অভিযোগ আছে। এছাড়া শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে যার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তিনি শাহবাগ এলাকায় থাকেন না বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ। পল্টন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে সাবেক সভাপতি বর্তমান কাউন্সিলর এনামুল হক আবুলকে আর সাধারণ সম্পাদক প্রস্তাব করা হয়েছে, আব্দুস সালামকে। ১৩ নং ওয়ার্ডে প্রস্তাবিত সভাপতি আরজু বারী ও সাধারণ সম্পাদক পাবেল নামের এক ব্যক্তিকে, তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

শাহজাহানপুর থানা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন। মতিঝিল প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি হচ্ছেন শেখ নশের, তিনি ওয়ার্ড নেতা ছিলেন, আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রস্তাব এসেছে জাকারিয়ার নামে একজনকে নাম। কদমতলী থানার সভাপতি হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিকের নাম, যাদের নামে চাঁদাবাজি বিভিন্ন অভিযোগ আছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত