পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলাসাকে কেন্দ্র করে গত ৩ মার্চ ইসলামী দলগুলোর ডাকে বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে পুলিশ-বিজিবির সাথে সংঘটিত সংঘর্ষে নিহত হয়েছিলেন আরিফ হোসেন নামের এক যুবক। মৃত্যুর ১৩০ দিন পর ময়নাতদন্ত করতে গত সোমবার সকালে নিহত আরিফের মরদেহ উত্তোলন করে জেলা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। আরিফ নিহত হওয়ার ঘটনার ৯৪ দিন পর বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন পঞ্চগড় থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক ফরহাদ হোসেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতেই সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এমএম মাহবুব ইসলাম মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। এ নির্দেশ পেয়ে ফরহাদ আহমেদ নামের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুলিশ তড়িঘড়ি করে মরদেহ উত্তোলন করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহত আরিফ হোসেন জেলা পৌরসভার ইসলামবাগ এলাকার ফরমান আলির একমাত্র ছেলে। তিনি একটি প্রিন্টিং প্রেসের কর্মচারী ছিলেন। সংঘর্ষের দিন আরিফ অন্যান্য মানুষজনের মতো তিনিও পুলিশ-মুসল্লি সংঘর্ষ দেখছিলেন। ঠিক ওই সময় পুলিশ-বিজিবির একটি দল রাবার বুলেট ও গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করার সময় আরিফ গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। গুলিটি তার মাথার পেছনের অংশ দিয়ে ঢুকে সামনের অংশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। সেখান থেকে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে জেলা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করলে রংপুর নেয়ার পথে তিনি মারা যান। আরিফ হোসেনের মৃত্যু নিয়ে পুলিশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে শিবির কর্মী হিসেবে বলে জানান। পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, আরিফ কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন না। আরিফ দীর্ঘদিন প্রথম আলো বন্ধুসভার সাথে কাজ করতেন। সর্বশেষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। কবরস্থানের পাশে দাঁড়িয়ে নিহত আরিফের বাবা ফরমান আলী জানান, কবর থেকে আরিফের মরদেহ তোলা হবে সে বিষয়টি তাকে জানানো হয়নি। এলাকার মানুষের কাছ থেকে খবর পেয়ে মরদেহ উত্তোলন দেখতে এসেছি। পঞ্চগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ মিয়া জানান, মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন করা হয়েছে। পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুর হুদা বলেন, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘর্ষে আরিফ হোসেনের মৃত্যুতে তার পরিবার কোনো মামলা করেননি। তাই পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। মৃত্যুর কারণ জানতে আদালতের নির্দেশে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।