পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় নৌবাহিনীর নবীন নাবিকদের প্রশিক্ষণ ও এভিয়েশন সুবিধা সম্বলিত ঘাঁটি বানৌজা শের-ই-বাংলা এবং খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডে নির্মিত চারটি পেট্রোল ক্রাফট ও চারটি ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউটিলিটির (এলসিইউ) কমিশনিং করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবন হতে ভিডিও টেলিকনফারেন্সের (ভিটিসি) মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ঘাঁটির অধিনায়ক কমোডর এম মহব্বত আলীর হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন এবং নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন। একই সাথে নৌবাহিনীর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে খুলনা শিপইয়ার্ডে পেট্রোল ক্রাফট স্কোয়াড্রোন এর চারটি যুদ্ধজাহাজ বানৌজা শহীদ দৌলত, শহীদ ফরিদ, শহীদ মহিবুল্লাহ ও শহীদ আখতার উদ্দিন এবং চারটি ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউটিলিটি (এলসিইউ) বানৌজা ডলফিন, তিমি, টুনা ও পেঙ্গুইন এর কমিশনিং করা হয়। এর মধ্যদিয়ে ঘাঁটি ও জাহাজগুলো নৌবাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করল। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পায়রাবন্দরসহ উপকূলীয় এলাকার সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় এসব ঘাঁটি নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নৌ সদস্যদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষায় বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার দেশি ও বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য নিরাপত্তায় অত্র অঞ্চলে একটি বিশেষায়িত ও স্থায়ী ঘাঁটির গুরুত্ব বিবেচনায় ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ বাস্তবায়নে এই ঘাঁটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা, ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় গত ১৯ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ ঘাঁটির নামফলক উম্মোচিত হয়। আধুনিক সকল সুবিধা সম্বলিত সুবিশাল ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ ঘাঁটিতে গড়ে তোলা হয়েছে নবীন নাবিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে গড়ে তোলা হয়েছে প্রশাসনিক ভবন, এভিয়েশন সাপোর্ট ও হ্যাঙ্গার সুবিধা সম্বলিত মাল্টিপারপাস শেড, বিভিন্ন রিপেয়ার ও মেইন্টেন্যান্স ওয়ার্কশপ।
এছাড়া ঘাঁটিতে এভিয়েশন সুবিধা এবং ডাইভিং স্যালভেজের কমান্ডো পরিচালনা সম্বলিত ইউনিট, নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল রয়েছে। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডে নির্মিত চারটি পেট্রোল ক্রাফট নৌবহরে অর্ন্তভুক্তির মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকার সুরক্ষা আরো সুদৃঢ় হলো।
এছাড়া নবনির্মিত এলসিইউসমূহ আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের আওতায় বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার জনগোষ্ঠীকে চট্টগ্রাম হতে ভাষাণচরে স্থানান্তর ও তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে।
পাশাপাশি এলসিইউসমূহ জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের সকল প্রকার সহায়তাসহ মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে। নবনির্মিত এসব জাহাজ ও ঘাঁটি কমিশনিংয়ের মাধ্যমে এ অঞ্চলে অবৈধ মৎস্য আহরণরোধ, চোরাচালান দমন, মানবপাচার রোধ, জলদস্যুতা এবং মাদকপাচার রোধসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিরসনকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ ঘাঁটিতে ভিডিও টেলিকনফারেন্সে সংযুক্ত হলে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহিন ইকবাল তাকে স্বাগত জানান।
এ সময় বানৌজা শের-ই-বাংলার একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডো, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক ব্যক্তি, নৌ দপ্তরের পিএসও, বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আইএসপিআর