লিচুর পর এবার দিনাজপুরের আম গেল ইংল্যান্ডে

প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  দিনাজপুর প্রতিনিধি

দিনাজপুরের বিরলের সুস্বাদু আম এবার প্রথমবারের মতো রপ্তানি হলো সুদুর ইংল্যান্ডে। দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে এতে যেমন লাভবান হবেন কৃষকরা, তেমনি উপার্জিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিবিড় পরিচর্যা ও তদারিকর কারণেই বিদেশে আম পাঠানোর প্রক্রিয়া সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়েছে। দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার শহরগ্রাম ইউনিয়নের দারইল গ্রামের মমিনুল ইসলামের দুটি বাগান থেকে নেয়া হচ্ছে এই আম। এর আগে একই উপজেলার চকভবানী গ্রামের আফজাল হোসেনের বাগান থেকে লিচু পাঠানো হয়েছিল ফ্রান্সে। লিচুর পর এবার ইংল্যান্ড জয় করতে যাচ্ছে দিনাজপুরের আম। গত বুধবার বিকালে দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে আম রপ্তানির বিষয়টি জানান উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, ইংল্যান্ডের লি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হচ্ছে ৫০০ কেজি আম। এর মধ্যে রয়েছে বারি-৪ জাতের ৩০০ কেজি এবং ব্যানানা ম্যাংগো জাতের ২০০ কেজি আম। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিরল উপজেলা কৃষি অফিসার মোস্তফা হাসান ইমাম, বাগান মালিক মো. মোমিনুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। কৃষি বিভাগ বলছে, মূলত দিনাজপুর লিচুর জন্য বিখ্যাত হলেও ধীরে ধীরে আম চাষ বাড়ছে। দিনাজপুরের আম গুণে-মানে অনন্য হওয়ায় রপ্তানির উদ্যোগ নেয় স্থানীয় কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় বিরল উপজেলার শহরগ্রাম ইউনিয়নের দারইল গ্রাম থেকে মমিনুল ইসলামের দুটি বাগানকে বেছে নেয় কৃষি বিভাগ। কীটনাশক ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে পরিচর্যা করা হয় এসব বাগানকে। এছাড়া আরো চারটি বাগান থেকে বারোমাসি ও লেট ভেরাইটির ব্যানানা ম্যাংগো ও কাটিমন চার মেট্রিক টন আমও প্রস্তুত রাখা আছে। রপ্তানির জন্য প্রস্তুত এই আমগুলো রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মোতাবেক ধাপে ধাপে পাঠানো হবে।

আম বাগান মালিক মো. মোমিনুল ইসলাম জানান, আমি নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আমার বাগানের আম দেশের সীমানা পাড়ি দিয়ে প্রথমমারের মতো বিদেশে যাচ্ছে। আমার বাগানের আম বিষমুক্ত ও নিরাপদ। আশা করি আমার বাগানের উৎপাদিত আম বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের সুনাম অর্জন করবে। তিনি জানান, বিরল উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোস্তাফা হাসান ইমামের কথায় অনুপ্রানিত হয়ে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য আম বাগান করি। আজ আমি অত্যন্ত খুশি যাদের পরামর্শে এই বাগান করেছি আজ তারাই ভালো দামে আমার আম কিনে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন। বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম জানান, দিনাজপুর লিচুর জন্য বিখ্যাত। কিছুদিন আগে এই বিরলের লিচুই ফ্রান্সে রপ্তানি হয়। কিন্তু লিচুর পাশাপাশি দিনাজপুরে আমের ব্যাপক উৎপাদন হচ্ছে। তাই তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী লিচুর মতো আমও বিদেশে রপ্তানি করার কার্যক্রম হাতে নেয়। তিনি আরো জানান, কৃষকদের আশা প্রত্যাশা জেনে এমন কাজে উৎসাহিত করে সফল ভাবে রপ্তানির মধ্যদিয়ে কৃষকদের লাভবান হতে সাহায্য করাটা পরম তৃপ্তির।

আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি রপ্তানিকারকদের চাহিদা অনুযায়ী বিরল উপজেলার নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক। আশা রাখি এই আম রপ্তানির করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মধ্য দিয়ে দেশ ও কৃষকরা লাভবান হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুজ্জামান বলেন, লিচুর পাশাপাশি আমের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় সেটির বাজার বৃদ্ধির লক্ষে রপ্তানির জন্য বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ করে কৃষি অফিস। রপ্তানির লক্ষ্য নিয়েই কয়েক মাস ধরে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া এবং উৎপাদন থেকে রপ্তানি পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে ছিল কঠোর নজরদারি। এমন উদ্যোগ কৃষির উন্নয়নে অবদান রাখবে।