চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের উপজেলায় সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নানা কৌশলে তারা ছিনতাই করে যাচ্ছে। দিনের বেলায় বাসের হেলপার আর রাতে দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী এ ধরনের একটি গ্রুপের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। চক্রের বহু সদস্যকে এরই মধ্যে আটক করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, নানা বেশ ধরে ছিনতাইকারী চক্র দাবড়ে বেড়াচ্ছে নগরীতে। এদের ধরতে পুলিশের বিভিন্ন টিম কাজ করছে।
পুলিশ জানায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন শ্রমিকদের একটি অংশ যাত্রী পরিবহনের আড়ালে ছিনতাই ডাকাতি, ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এ ধরনের একটি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে খুলশী থানা পুলিশ। তারা মূলত পরিবহন শ্রমিক। দিনে যাত্রী পরিবহনের কাজ করলেও রাতের আঁধারে তারা হয়ে উঠে অপরাধী। এরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সক্রিয় সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। চক্রের বেশ কিছু সদস্য রয়েছে। যারা ছিনতাইয়ের কাজের সুবিধার জন্য এসব পেশা বেছে নিয়েছে। এ চক্রের সদস্যরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিবহনে কাজ করে। এরপর রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা হয়ে ওঠে একেকজন ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী। এ চক্রটি মাঝেমধ্যে মোটরসাইকেলে চড়েও ছিনতাই করে থাকে। ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি বাসও জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, এই চক্রের সদস্যরা দিনের বেলায় ফিটনেসবিহীন বাস নিয়ে নগরীর বিভিন্ন জায়গার পোশাক কারখানার শ্রমিক পরিবহনের কাজ করে। আর রাতে ওই বাসে যাত্রী তুলে তাদের মারধর করে টাকাণ্ডপয়সা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এই চক্রের গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন- মো. আজিম (২৫), সাজ্জাদ হোসেন আজাদ (২৪), মো. নিশাদ (২০), মুন্না (২১) ও সাইফুল ইসলাম নাঈম (২৬)। খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, ১২ জুলাই নগরীর চান্দগাঁও থানার মৌলভীপুকুর পাড় এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। নগরীর খুলশি থানার ওসি বলেন, গত ৯ জুলাই ভোরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর-৯৯৯ এ ফোন করে পারভেজ খান নামের এক ব্যবসায়ী জানান, একটি বাসে উঠে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছেন তিনি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্তে নেমে চক্রটিকে ধরেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিজেদের পেশাদার ছিনতাইকারী হিসেবে পরিচয় দেয়। এছাড়াও তারা প্রত্যেকে যাত্রী পরিবহনের সঙ্গেও জড়িত। ছিনতাই কাজের সুবিধার জন্য তারা এসব পেশা বেছে নিয়েছে। বাসে নিয়মিত যাতায়াতকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের গতিবিধি অনুসরণ করে থাকে। কোন প্রতিষ্ঠানের বেতন ভাতা কবে দেয়া হবে সেই খোঁজখবরও রাখে। বাসে ভাড়া নেয়ার সময় যাত্রীর কাছে কী পরিমাণ টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী আছে তাও অনুমান করার চেষ্টা করে। কোন যাত্রীর কাছে মোটা অঙ্কের টাকা অথবা মূল্যবান সামগ্রী আছে জানতে পারলে বাস থেকে সেই যাত্রী নেমে যাওয়ার পরপরই তারা অন্য সদস্যদের ওই যাত্রীর বেশভূষা ও কোথায় নেমেছে তার বিস্তারিত বিবরণ জানায়। আবার রাতে বাসে যাত্রী পরিবহনের সময় চক্রের কয়েকজন সদস্য যাত্রীবেশে বাসেই অবস্থান করে এবং টার্গেটকৃত যাত্রীর সর্বস্ব কেড়ে নেয়।
ওসি জানান, পারভেজ খান একজন কাঠ ব্যবসায়ী, মুন্সীগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামে এসেছিলেন বন্দর থেকে কাঠ কেনার জন্য। গত রোববার ভোর সোয়া ৪টার দিকে তিনি জিইসি মোড়ে বাস থেকে নামেন। ওই সময় বন্দরে যাওয়ার জন্য একটি বাসে উঠে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। বাসে যাত্রীবেশে বসে ছিল ছিনতাইকারীরা। বাসটি লালখান বাজার মোড় থেকে ডান পাশ দিয়ে ইউটার্ন নিয়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে উঠে যায়। চালকের সহকারী তখন বাসের দরজা আটকে দেয়। যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা এরপর পারভেজকে মারধর করে তার মোবাইল, নগদ সাড়ে ২০ হাজার টাকা, ঘড়ি ও ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। এরপর পারভেজকে ফ্লাইওভারের উপরে ফেলে রেখে বাসটি নিয়ে চলে যায়। পরে পারভেজের ফোন পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
ওসি সন্তোষ জানান, পারভেজের অভিযোগ পাওয়ার পর খুলশী থানা পুলিশের একটি দল জিইসি, ওয়াসা, সানমার, চান্দগাঁও, এক কিলোমিটার, বহদ্দারহাট, মুরাদপুরসহ বিভিন্ন স্থানের ৭৭টি সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে বাসটি শনাক্ত করে। এরপর গত মঙ্গলবার চান্দগাঁও থানার মৌলভীপুকুর পাড় এলাকা থেকে বাসটি জব্দ করা হয়। ওই সময়ে বাসের ভেতরে থাকা আজিম, সাজ্জাদ, নিশান ও সাইফুলকে আটক করা হয়। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে এই চারজন অপরাধ স্বীকার করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যে সিঅ্যান্ডবি এলাকা থেকে মুন্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, যাত্রীরা সচেতন হয়ে পুলিশকে খবর দিলে কিংবা থানায় অভিযোগ দিলে বিষয়টি নজরে আসে। তাদের ধরতে সুযোগ সৃষ্টি হয়। অনেকে বিষয়টি থানা পর্যন্ত জানাতে চান না। এতে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র অধরা থেকে যায়।