চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক যেন মরণফাঁদ

তিন দিনে পাঁচজনের মৃত্যু

প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক। প্রায় প্রতি সপ্তাহে দুর্ঘটনায় ঝরছে প্রাণ। গেল তিন দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজন মারা গেছেন। এসব দুর্ঘটনায় অসংখ্য যাত্রী পথচারী আহত হয়েছেন। তারা ভর্তি রয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। এদের অনেকে প্রাণে বেঁচে গেলেও পঙ্গু হয়ে গেছেন চিরতরে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বেশিরভাগ চালকের লাইসেন্স নেই। আবার চালকদের বড় অংশ অদক্ষ। গাড়িগুলো পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় ফিটনেসবিহীন। এসব গাড়ি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে এই সড়কে। এতে প্রায় সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রাণহানি ও হতাহতের সংখ্যাও বাড়িয়ে তুলছে। সড়কে যানবাহন চলাচলে কোনো শৃঙ্খলা না থাকায় দুর্ঘটনা বাড়লেও পুলিশের তদারকি তেমন নেই। এতে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, চলাচল অনুপযোগী গাড়িগুলো মাসোহারা দিয়ে চলছে। পুলিশের কিছু অসাধু সদস্য তাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে মাসোহারা নিয়ে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলের জন্য সুযোগ করে দিচ্ছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের বৈজ্জালী গেট এলাকায় ১৩ জুলাই রাত সাড়ে ৮টায় দাঁড়িয়ে থাকা বালুবাহী ট্রাকের সাথে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে ফায়ার ফাইটার পদে কর্মরত জয় চৌধুরী (২৯) ও রাঙ্গুনিয়া পোমরা শান্তির হাট এলাকার অন্তু তালুকদার (২২) নিহত হন। নিহতরা মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন। ১৩ জুলাই দুপুর আড়াইটায় রাঙ্গুনিয়া নিশ্চিন্তাপুর সেগুনবাগিচা সড়কে কাঠবোঝাই জিপ উল্টে সাজ্জাত হোসেন (১৬) নামের এক শ্রমিক নিহত হন। ১৩ জুলাই সকালে কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কের রাঙ্গুনিয়া ভবানি মিল এলাকায় ট্রাকের সাথে বিপরীত দিক থেকে আসা সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে আরবি প্রভাষক আলতাফ হোসাইন (৫১), উজ্জ্বল বড়ুয়া (৫০), ঘাটচেক পৌরসভার আরফাত (২০) গুরুতর আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কের চন্দ্রঘোনা জুমপাড়া সাবস্টেশন এলাকায় ২৯ জুন রাত সাড়ে ৯টায় মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৩ জুলাই রাত সাড়ে ৮টায় হোসনাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান দানু মিয়ার ছেলে সেকান্দর হোসেন লিটু (৩৫) মারা যান।

১২ জুলাই রাত ১১টায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়া পোমরা ইউনিয়নের সত্যপীর মাজার গেট এলাকায় সিএনজি অটোরিকশার সাথে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে মো. ফয়সাল (১৩) নামের এক স্কুল ছাত্র নিহত হয়। এ সময় নিহতের মা আনোয়ারা বেগম (৪০) গুরুতর আহত হন। কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে সচেতনমহল দাবি জানিয়েছে।

রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ নিয়মিত লাইসেন্সবিহীন চালকসহ ফিটনেসবিহীন গাড়ি আটক করছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব যানবাহন আবার চলে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে। তাছাড়া এসব গাড়িকে অবাধে চলাচল সুবিধা দিতে শ্রমিক নেতা নামধারী কিছু ব্যক্তি প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন। এজন্য ফিটনেসবিহীন গাড়ি আটক করলেও চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করা যায় না। পুলিশ প্রতি মাসে ফিটনেসবিহীন গাড়ি থেকে মাসোহারা আদায় করে কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী শফিকুল ইসলাম বলেন, ফিটনেসবিহীন পুরোনো গাড়িগুলো দুর্ঘটনার জন্য একমাত্র দায়ী, বিষয়টি এরকম নয়। এই সড়কটি প্রশস্ত নয়। গেল দুই যুগে গাড়ি চলাচলের সংখ্যা অন্তত পাঁচগুণ বেড়েছে। সেই তুলনায় সড়কটির পরিসর বড় করা হয়নি। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বিপজ্জনক মোড় ও বাঁক। এ কারণে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে নিয়মিত দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা বেড়েই চলেছে।