ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংবাদ সম্মেলন
রামু উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দখলবাজির অভিযোগ
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
কক্সবাজারের রামু থানা পুলিশের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে একই উপজেলার চেয়ারমান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল এক নারীর জমি দখল করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আদালতের নিষেধজ্ঞা অমান্য করে ওই উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের পেচারদ্বীপ গ্রামের মো. আলমের (মেম্বার আলম) স্ত্রী মমতাজ বেগমের ক্রয়কৃত ৭৭ শতক জমি দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে উপজেলা চেয়ারম্যান কাজল। এমন অভিযোগ তুলে গতকাল রবিবার কক্সবাজার শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। ভুক্তভোগী পরিবার ও আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি একই গ্রামের মৃত ছিদ্দিকের আহমদের কাছ থেকে ১৫ একর ২০ শতক জমি বায়না করেন মমতাজ বেগম। পরে ওই বছরের ৪ মার্চ ছিদ্দিক আহমদ মারা গেলে জমি রেজিসিস্ট্র পেতে রামু সহকারী জজ আদালতে ৬৩/২০০৪ মামলা করেন মমতাজ। পরে আরএসও বিএস মতে ২০০৯ সালের ২৪ আগস্ট বাদী পক্ষে ডিগ্রি দেন রামু আদালতের সহকারী জজ ফারহানা ইয়াসমিন। সেই ডিগ্রিতে ৬ মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রি করার নির্দেশ দেন আদালত। তবে সেই আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করেন ছিদ্দিক আহমদের বোন মরিয়মের নাতি আহমদ হোছেনসহ আরো ১০ জন। তবে তাদের মিচ মামলা ২৩/২০১০ খারিজ করা দেয় আদালত এবং মরিয়মের নামে কোনো জায়গা সম্পত্তি নাই বলেও আদালত রায় ঘোষণা করেন। এছাড়া ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রামুর সহকারী জজ মো. বেলাল মমতাজ বেগমের নামে ২ একর ১৫ শতক জমি রেজিস্ট্রি কর দেন। সেই জমির দখল পেতেই মরিয়া হয়ে উঠেছে উপজেলা চেয়ারম্যান। গেল ১৩ জুলাই জমি দখল করতে গিয়ে ভুক্তভোগী নারী মমতাজ ও মেয়ে আকলিমা আকতারসহ আরো কয়েকজন নারীকে মারধর ও লাঞ্চিত করেন উপজেলা চেয়ারমানের অনুসারীরা। এর আগে পুলিশের উপস্থিতিতেই ৬ জুলাই একই জমি আরেকবার দখলের চেষ্টা করেছিলেন ওই চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে জমির মালিক মমতাজ বেগমের স্বামী মো. আলম বলেন, ৪০ বছর ধরে আমরা ওই জমি ভোগ-দখলে আছি। এছাড়া আদালতের প্রতিটি রায় আমাদের পক্ষে। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান কাজল ক্ষমতাসীন দল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাদের ভোগ-দখলীয় জমি দখলের চেষ্টা করছেন।
তিনি আরো বলেন, মিথ্যা তথ্য ও ভুয়া জাল দলিল দিয়ে কাজল ওই জমি নিজের নামে ৭১৪ নম্বর খতিয়ানভুক্ত করে নামজারি করেছেন। তবে ওই নামজারি খতিয়ান ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট স্থগিত করেন। এরপর কক্সবাজার অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত একই বছরের ১৬ নভেম্বর একই খতিয়ানের কার্যক্রম স্থগিত করেন। কিন্তু তিনি আদালতের কোনো আদেশই মানছেন না। গায়ের জোরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করছেন বারবার।
কীভাবে কাজল নামজারি করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, ছিদ্দিক আহমদের বোন মরিয়ম ১৯৮৩ সালের ২৩ আগস্ট মারা গেছেন। অন্যদিকে ছিদ্দিক আহমদ মারা গেছেন ১৯৯৭ সালে। অথচ দলিলে তিনি ছিদ্দিককে মৃত দেখিয়ে ছিদ্দিকের বোনকে ওয়ারিশ বানিয়ে দলিল সম্পাদন করেছেন, যা সীমাহীন জালিয়াতি। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের দেওয়া তথ্য মতে, ৬ জুলাই পুলিশ এবং শতাধিক অনুসারী নিয়ে মমতাজ বেগমের জমি দখল নিতে যান উপজেলা চেয়ারম্যান কাজল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ভুক্তভোগী পরিবার পৌঁছলে কাজল সালিশি বৈঠকের কথা বলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে ৮ জুলাই কক্সবাজার আইনজীবি সমিতির ভবনে উভয় পক্ষে বৈঠকে মিলিত হলেও সেখান থেকে কোনো সুরাহা না পেয়ে ১৩ জুলাই সকালে জমি দখলে যান কাজল ও তার অনুসারীরা। সেদিন দখলে বাধা দিতে গেলে আহত হন মা মেয়েসহ তিনজন।
এ বিষয়ে আহত মমতাজ বেগমের মেয়ে আকলিমা আকতার বলেন, ১৩ জুলাই চেয়ারম্যান কাজল শতাধিক সন্ত্রাসী ও লোকজন নিয়ে আমাদের জমি দখলে যায়। ওই সময় ৯৯৯ আমরা কল করি। পরে পুলিশ আসে। কিন্তু পুলিশের সামনেই কাজলের লালিত সন্ত্রাসী আবদুল মালেকের নেতৃত্বে আমার ও আমার মায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুলিশ কোনো বাধা দেয়নি। এ ঘটনায় আমার মা বাদী কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এছাড়া আদালতে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।
জমির মালিক মমতাজ বেগম বলেন, কাজল নিজে উপজেলা চেয়ারম্যান। আবার উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি। তার ছোট ভাই সদর রামু আসনের এমপি। এসব ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাজল আমার জমি দখল নিতে বারবার হামলা চালাচ্ছে। আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই। রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল বলেন, ওই জমি আমার নামে নামজারি করা। আমি নিয়মিত খাজনা দিই। সেই কারণে আমি সার্ভে করতে গিয়েছিলাম। খুঁটি পুঁতে সীমানা নির্ধারণ করে এসেছি। ওখানে অন্য কোনো পক্ষ ছিল না। আমি আসার পর আলম মুন্সী ও তার পরিবার সংবাদ সম্মেলন করেছে বলে শুনেছি। তিনি আরো বলেন, গত ৮ জুলাই বার ভবনে বিষয়টি নিয়ে আমরা বসে ছিলাম। কিন্তু আলম মুন্সী কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে পারেননি সেখানে। জায়গাটি আপিল বোর্ডের আদেশ মতেই আমার নামে নামজারি করা হয়। এখানে স্থগিতের কোনো বিষয় নেই। রামু থানা পুলিশের ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি ২ বছর রামু থানার ইনচার্জ হিসেবে আছি। এই সময় পুলিশ জমি-সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে কখনো হস্তক্ষেপ করেনি। তাই পুলিশের উপস্থিতিতে জমি দখল এটি মিথ্যা কথা।
তিনি আরো বলেন, গেল ১৩ জুলাই ৯৯৯ এ কল পেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পেচারদ্বীপে গিয়েছিলেন হিমছড়ি পুলিশ ফাঁড়ির টু আইসি রাকিব। এই ফোনটি করেছিলেন একজন নারী।