ঢাকা ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কক্সবাজারে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে বিচারিক কার্যক্রম

আতঙ্কে কর্মকর্তা ও বিচারপ্রার্থীরা
কক্সবাজারে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে বিচারিক কার্যক্রম

ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে উঠেছে কক্সবাজারে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন। ফাটল দেখা দিয়েছে ভবনের পিলারে, ভেঙে পড়েছে পলেস্তারা। এতে যে কোনো সময় বিচারপ্রর্থীদের অঙ্গ ও জীবনহানির মতো দুর্ঘটনা ঘটনার সম্ভবনা রয়েছে। আর ঝুঁকি মাথায় নিয়ে আতঙ্কে কাজ করে যাচ্ছেন আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ অবস্থায় দ্রুতই বিচার কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা। ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগীর বিষয়টি নিশ্চিত করে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আশেক এলাহী শাহজাহন নুরী বলেন, ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তথ্যমতে, ১৯৫২ সালে কক্সবাজারে বিচারক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পাশে একতলা কক্সবাজার জেলা জজ আদালত ভবন নির্মাণ করে তৎকালীন সরকার। বর্তমানে ভবনটিতে চিফ জুডিশিয়াল ও সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গেল কয়েক বছর ধরে ভবনের বিভিন্ন পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়ছে ছাদের পলেস্তারাও। এ অবস্থায় চরম আতঙ্ক এবং ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন আদালতের বিচারক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা। এছাড়া পলেস্তারা খসে পড়ে প্রাণহানী এবং অঙ্গহানীর আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ভবন থেকে বিচারিক কার্যক্রম সরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন আইনজীবী সমিতির নেতারা। আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নুরুল ইসলাম সায়েম বলেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দ্রুত বিচারিক কার্যক্রম সরিয়ে নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। সম্প্রতি বিচারকার্য চলাকালীন সময় ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। বড় কোনো দুর্ঘটনা এড়াতে এখন থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে, ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ার কথা জানিয়ে গেল ৫ জুন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা জজসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি দিয়েছে কক্সবাজার গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী।

চিঠিতে তিনি বলেন, কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের পুরোতন একতলা ভবনটির (বর্তমানে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে) কলামগুলো (পিলার) ফেটে গেছে এবং ছাদের সিলিং থেকে পলেস্তারা ও কনক্রিট ভেঙে পড়ে যাচ্ছে। ভবনের কাঠামো দুর্বল হওয়ায় মেরামত, আস্তর ও রং করেও টেকসই হচ্ছে না। ফলে ভবনটি মানুষের অঙ্গ ও জীবনহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিচার প্রার্থীদের প্রতিদিন আতঙ্কের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে আদালতের কার্যক্রম সরিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কক্সবাজার জেলা জজ, চট্টগ্রাম গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, চট্টগ্রাম গণপূর্ত সার্কেল-২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী, প্রকল্প সার্কেল-২, এবং উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, গণপূর্ত উপ-বিভাগ-১/ইএম, কক্সবাজারকে অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে ৬ হাজার বর্গফুটের একটি টিনশেড সেমিপাকা ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় ৭২ লাখ ১১ হাজার ৮১৭ টাকা বরাদ্দ দেয়ারও সুপারিশ করা হয় চিঠিতে। জানতে চাইলে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আশেক এলাহী শাহজাহান নুরী বলেন, ভবনটির জরাজীর্ণ অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবহার অনুপযোগী বলে চিঠি দিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু অন্য কোনো উপায় না থাকায় এখনো ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে আমাদের। ভয়ে ও আতঙ্কে থাকি কখন জানি পলেস্তারা খসে মাথায় পড়ে। আশা করছি দ্রুত কার্যক্রম সরিয়ে নিতে ব্যবস্থা নিবে সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে কক্সবাজার গণপূর্ত অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় ব্যবহার অনুপযোগ বলে তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি। সরকার টাকা বরাদ্দ দিলে আমরা ভবন করে দিব। নতুন ভবন না করা পর্যন্ত হয়তো এ ভবনে বিচারিক কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন। বিচারিক কার্যক্রম তো আর থামিয়ে রাখা যাবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত