সুসংবাদ প্রতিদিন

পাপোশ তৈরি করে সচ্ছল ২০০ নারী

প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে পড়াশোনা ছাড়তে হয় হালিমা বেগমকে। এক বছর যেতে না যেতেই তার কোলজুড়ে আসে এক ছেলে সন্তান। আর তখনই জীবিকার তাগিদে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান হালিমার স্বামী বিপ্লব ইসলাম। এরপর থেকেই যেন থমকে যায় হালিমার জীবন। স্ত্রী-সন্তানের খোঁজ নেন না বিপ্লব। তারপরও স্বামীর পথ চেয়ে দীর্ঘদিন অনেক কষ্টে শ্বশুরবাড়িতেই থেকে যান হালিমা। পরে আর কোনো উপায় না পেয়ে আশ্রয় নেন বাবার বাড়িতে। হালিমা হঠাৎ একদিন জানতে পারেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের ধানঘড়া এলাকায় দরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে নিরাশা দূরীকরণ আর্থসামাজিক উন্নয়ন সংস্থা (ডিএসডিও) নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এরপর তিনি সময় নষ্ট না করে ডিএসডিওর প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে পাপোশ তৈরির কাজ শিখে ফেলেন। পরে সেখানেই তার কর্মসংস্থান হয়ে যায়। হালিমা প্রায় ছয় মাস ধরে পাপোশ বানানোর কাজ করছেন। তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও খুব হীনমন্যতায় ভুগতাম। বাচ্চাটাকে নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। এখন আর সেই চিন্তা নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দরিদ্র, বিধবা, এতিম ও অসহায় নারীদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নারী উদ্যোক্তা সাবিনা ইয়াসমিনের হাত ধরে সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের মধ্য ধানঘড়া এলাকায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে নিরাশা দূরীকরণ আর্থসামাজিক উন্নয়ন সংস্থা (ডিএসডিও)। প্রথমদিন থেকেই দরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রশিক্ষণ শেষে ওই নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগও করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ঢাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানা থেকে ঝুট কাপড় সংগ্রহ করে তাঁতের মাধ্যমে পাপোশ তৈরি করা হয়। এরপর সেলাই মেশিনে সেগুলোতে ডিজাইন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে মাসে সাড়ে সাত থেকে আট হাজার পাপোশ উৎপাদন হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে প্রতিটি পাপোশ পাইকারি দরে প্রকার ভেদে ২৬ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকায়। ডিএসডিওর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো. শামীম হোসেন বলেন, নারী উদ্যোক্তা সাবিনা ইয়াসমিন দরিদ্র ও অসহায় নারীদের কর্মমুখী করতে পাপোশ কারখানা করেছেন। এখানে প্রায় ২০৩ জন নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে ভালো মজুরিতে কাজ করছেন। এতে তাদের সংসারের অভাব ঘুচেছে। সবার সহযোগিতা পেলে এখানে আরো নারীর কর্মসংস্থান করা সম্ভব। গাইবান্ধা বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রবীন চন্দ্র রায় বলেন, প্রতিষ্ঠানটিকে কুটির শিল্পে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। পরে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালকসহ তিনজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারা দরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর কাজের সুযোগ দিচ্ছেন। এছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।