রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছুরিকাঘাতে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী আদনান সাঈদ রাকিবকে হত্যার কারণ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি-ডিএমপি)। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্যও জানিয়েছে ডিবি। তারা ছিনতাইকারী এমন দাবি করে পুলিশ জানিয়েছে, মোবাইল দিতে অস্বীকার করায় রাকিবকে সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে আঘাত করেন তারা। পরে রাকিবের মৃত্যু হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. ইকবাল (১৬), মো. সুমন ভুইয়া ওরফে বড় সুমন (২৫) ও মো. সুমন ওরফে কালু সুমন ওরফে ছোট সুমন (১৪)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা ও একটি সুইচ গিয়ার চাকু জব্দ করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, কলেজছাত্র আদনান সাঈদ রাকিব (১৭) হত্যাকাণ্ডের ১২ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদ্ঘাটন, মূল আসামিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি আমরা। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকুও জব্দ করা হয়। সেই সঙ্গে লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করেছি।
তিনি বলেন, নিহত আদনান সাঈদ রাকিব কলাবাগানের গ্রিনরোড স্টাফ কোয়ার্টারের ৪/বি/২ বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকত। গত রোববার রাত ৯টার দিকে ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরে বন্ধু রাইয়ানের সঙ্গে চা-পানের কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। রাকিব ও রাইয়ান রবীন্দ্র সরোবরে চা-পান শেষ করে বাসায় ফেরার পথে মিরপুর রোড সংলগ্ন শেখ জামাল মাঠের পূর্বপাশে নার্সারির সামনের ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। রাত ১০টা ৫৫ মিনিটে চার ছিনতাইকারী তাদের গতিরোধ করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে মোবাইল ও মানিব্যাগ দিতে বলে। এ সময় রাইয়ান কালো রঙের বাটন সিমফোনি মোবাইল দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু রাকিব মোবাইল দিতে অনীহা প্রকাশ করায় ছিনতাইকারীরা ধারালো চাকু দিয়ে তার ডান কাঁধের নিচে ও বাম উরুতে আঘাত করে। এসময় তারা রাকিবের কাছে থাকা দুটি মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেন।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, এসময় রাকিব চিৎকার করলেও আশপাশ থেকে কেউ না আসায় সে রাস্তা পার হয়। রাস্তার পূর্বপাশে গ্রিন রোড স্টাফ কোয়ার্টারের ১ নম্বর গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকে। সেখানে একটি বাসার সামনে রাস্তার ওপর উপুড় হয়ে পড়ে যায়। এরপর রাকিব যে কোয়ার্টারে থাকত, সেখানকার বাসিন্দা আবু বক্কর সিদ্দিক রাকিবের বাবাকে মোবাইলে বিষয়টি জানান এবং বড় ভাই আরমান সজিব হৃদয়কে ডাকেন।
খবর পেয়ে রাকিবের বড় ভাই দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। এরপর তাকে কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) মর্গে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় গত সোমবার রাতে নিহত রাকিবের পরিবার বাদী হয়ে ধানমন্ডি মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাতেই অভিযান চালিয়ে মূল হত্যাকারীসহ তিন ছিনতাইকারীকে রায়েরবাগ বস্তি এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাব ডিবিপ্রধান বলেন, ঈদের পরপর ছিনতাইয়ের ঘটনা কিছুটা বেড়েছিল। এরপর ডিবি ও থানা পুলিশ ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে। আমরাই অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০০ জনের মতো ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছি।