মেট্রোরেল
দুই মাসেও শনাক্ত হয়নি আসামি সন্দেহের তালিকায় পাঁচজন
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢিল মেরে মেট্রোরেলের কাচ ভাঙার ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে দুই মাস। এ সংক্রান্ত মামলার তদন্তে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই। দুই মাসে দফায় দফায় চার ভবনের ২০ জনকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। ঢিল মারার বিষয়টি স্বীকার করেননি কেউ। তদন্ত কর্মকর্তারাও স্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারছেন না। তবে পুলিশের শর্টলিস্টে পাঁচজনের নাম আছে। ধারণা করা হচ্ছে এদের মধ্যে একজনই দায়ী। পুলিশ বলছে, শত শত সিসিক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তবে ঢিল নিরক্ষেপকারীকে শনাক্ত ঠিকঠাক করা যায়নি। ২০ জনের মধ্যে শর্টলিস্টে পাঁচজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শী ও অকাট্য প্রমাণের অভাবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। গত ৩০ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানী ঢাকার শেওড়াপাড়া এলাকায় মেট্রোরেল লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়। মেট্রোরেলের ভেতরে থাকা সিসিক্যামেরার ফুটেজ দেখে ঢিল ছোড়ার সময় ও অবস্থান শনাক্ত করা হয়। ওইদিনই কাফরুল থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন ঢাকা মেট্রোরেল লাইন-৬ এর সহকারী ব্যবস্থাপক (লাইন অপারেশন) মো. সামিউল কাদির। এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৩০ এপ্রিল আনুমানিক বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্টেশন কন্ট্রোলার মিরপুর-১০ থেকে জানা যায়, আগারগাঁও থেকে উত্তরা উত্তরাগামী মেট্রোট্রেন কাজীপাড়া স্টেশনে প্রবেশের পূর্বমুহূর্তে স্টেশনের পূর্ব কাজীপাড়ার পূর্বপাশ থেকে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি মেট্রোরেলের ক্ষয়ক্ষতি ও যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘিœত করতে ঢিল নিক্ষেপ করেছে। এতে একটি জানালার গ্লাস ভেঙে যায়। যার ক্ষতির পরিমাণ ১০ লাখ টাকা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কাফরুল থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন্স) মো. আব্দুল বাতেন জানান বলেন, কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশনের পূর্ব পাশের একাধিক সিসিক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে অর্ধশত স্থানীয় সন্দেহভাজনকে। তবে কোনো কূল-কিনারা হয়নি। খোঁজ মেলেনি ঢিল নিক্ষেপকারীর। তবে আসামি শনাক্তে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশে বহুতল অনেক ভবন রয়েছে। কোনো ভবন বা ছাদ থেকে ঢিলটি ছুড়ে মারা হয়ে থাকতে পারে। তবে আমরা ঘটনার সম্ভাব্য এলাকার শত শত সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করেছি। ৫ থেকে ৬ জনকে ঘোর সন্দেহ করছি। তাদের পুলিশ হেফাজতে নানাভাবে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কেউ স্বীকার করেনি। তাদের মধ্যেই একজন এ কাজ করতে পারে বলে সন্দেহ। কিন্তু শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে তো কারো বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। দরকার সাক্ষ্য ও অকাট্য প্রমাণ। সেটা আমরা এখনো পাইনি। তিনি বলেন, সমস্যা তো উভয় দিকেই। মেট্রো স্টেশনের বাইরে ওপরের দিকে কোনো সিসিক্যামেরা নেই। আবার স্টেশনের বাইরে, বামে-ডানে, উত্তর-দক্ষিণে নেই কোনো সিসিক্যামেরা। তাদের সিসি ক্যামেরা শুধু প্ল্যাটফর্মে ফোকাস করা। যে কারণে কোনো প্রমাণ আমরা সংগ্রহ করতে পারিনি। মামলার তদন্ত আপনাদের কাছে থাকবে নাকি নতুন গঠিত এমআরটি পুলিশ তদন্ত করবে জানতে চাইলে ওসি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরাই তদন্ত করছি। তাদের কার্যক্রম এখনো সেভাবে শুরু হয়নি। এদিকে মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে এরই মধ্যে মেট্রো পুলিশ ইউনিট বা এমআরটি পুলিশ গঠন চূড়ান্ত করেছে সরকার। গত মে মাসে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ পুলিশ-৩ শাখা থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এমআরটি মেট্রোরেল সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনটি ক্যাডার পদ ও ২২৮টি নন-ক্যাডার পদসহ মোট ২৩১টি পদ সৃজন এবং ১৫টি যানবাহন টিওঅ্যান্ডইভুক্তকরণ হয়। গত ১৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়- এমআরটি পুলিশের প্রথম ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন শিল্পাঞ্চল পুলিশের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক জিহাদুল কবির। এছাড়া এমআরটি পুলিশের প্রথম পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন পুলিশ সুপার মো. শফিকুল ইসলাম। পুলিশের এ ইউনিট গঠনে একজন উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) নেতৃত্বে ২৩১ জনের জনবল চূড়ান্ত করা হয়।