বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে জলবায়ু পরিবর্তন একটি মারাত্মক সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। প্রতিনিয়ত দেশটি জলবায়ুগত নানাবিধ সমস্যা মোকাবিলা করছে যার মধ্যে অন্যতম হলো খরা। এ দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার উদ্দেশ্যে গতকাল শনিবার দুপুরের দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় খরা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সম্মেলনে সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. মো. শাহ্ আজম জাতীয় খরা সম্মেলন ২০২৩-এর একটি সেশনের চেয়ার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, খরা হলো বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিকর এবং ব্যয়বহুল প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে অন্যতম। খরা মারাত্মকভাবে কৃষি, অর্থনীতি, পানি সম্পদ, পরিবেশ এবং সমাজকে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রায় প্রতি বছরই এ দেশ একাধিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। যেমন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, ঝড়বৃষ্টি, উপকূলীয় ক্ষয়, বন্যা ও খরা। এতে ব্যাপক জীবন ও সম্পদের ক্ষতি হয় এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে হুমকির মুখে ফেলে। ১৯০৪ সালে ব্রিটিশ গভর্মেন্টের রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথ ‘স্বদেশী সমাজ’ প্রবন্ধটি লিখেন। এখানে ভারতবাসীর জলকষ্ট বিষয়টি উঠে আসে। আজ থেকে ১২৫ বছর পূর্বেও আমরা খরা সমস্যায় ছিলাম এবং তা এই লেখায় প্রমাণ করে। রবীন্দ্রনাথ বীরভূমে ১৯২২, ১৯২৬-এ প্রকট খরার কারণে কৃষি সমন্বয়ের আদলে সেচ সমন্বয় প্রথার সূচনা করেছিলেন। উল্লেখ্য ৪৯৯টি সেচ প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৬০ থেকে ১৯৯১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ১৯টি খরা হয়েছিল। এছাড়াও বাংলাদেশ ১৯৫১, ১৯৫৭, ১৯৬১, ১৯৭২, ১৯৭৬, ১৯৭৯, ১৯৮৯ এবং ১৯৯৭ সালে মারাত্মক খরার সম্মুখীন হয়েছিল। এ কারণে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে উন্নততর পানি ও শস্য ব্যবস্থাপনা, অন্যান্য উৎসের সঙ্গে পানি সরবরাহ বৃদ্ধি, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, পানি সংরক্ষণ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ, খরা পর্যবেক্ষণ ও সেচ ব্যবস্থাপনার প্রযুক্তি, তীব্র জলাবদ্ধতা ও স্থানীয় পরিকল্পনা এবং পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।