ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যানবাহনে সুরক্ষিত আসন শিশু মৃত্যুর হার কমবে

যানবাহনে সুরক্ষিত আসন শিশু মৃত্যুর হার কমবে

গ্লোবাল রোড সেইফটি পার্টনারশিপের তথ্যানুযায়ী যানবাহনে শিশু সুরক্ষিত আসন ব্যবহারে শিশু মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে প্রায় ৭০ শতাংশ এবং বড় শিশুদের ক্ষেত্রে প্রায় ৫৪-৮০ শতাংশ মৃত্যুর হার কমে আসবে। গতকাল রোববার রাজধানীর শ্যামলীস্থ ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টর আয়োজিত নিরাপদ সড়ক জোরদারকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব তথ্য উঠে আসে।

আলোচনা সভায় প্রতিষ্ঠানটির রোড সেইফটি প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী শারমিন রহমান তার বক্তব্যে বলেন, বিশ্বে ৫-২৯ বছর বয়সিদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনা মানুষের মৃত্যুর অষ্টমতম তালিকায় রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অব রোড সেইফটি ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১০ লাখ ৩০ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে এবং আহত হচ্ছে গড়ে প্রায় ৫ কোটি মানুষ। সেখানে বাংলাদেশে রোড ক্রাশে প্রতি বছর আনুমানিক ২৪ হাজার ৯৫৪ জন মানুষের মৃত্যু হয়। রোড ক্রাশের ফলে দেশে শতকরা ৫ ভাগ জিডিপি কমে যাচ্ছে।

ইউএনবির রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসের তুলনায় দ্বিতীয় ভাগে (এপ্রিল-জুন) সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর হার ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে গেছে। দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত গত ২৮ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৬৭৪ জন শিশুর মৃত্যু হয়। সড়কে শিশু মৃত্যু ঠেকাতে গাড়িতে সিট বেল্ট বাঁধা, যানবাহনে শিশুদের উপযোগী সিটের ব্যবস্থা করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৭ হাজার ৭১৩ জন। এর মধ্যে ৩ মাস থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুর সংখ্যা ১ হাজার ১৪৩ জন। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে তিনজনের বেশি শিশু সড়কে প্রাণ হারিয়েছে।

সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অনুসারে, যানবাহনে শিশুবান্ধব আসনের ব্যবহার শিশুদের সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাতের ঝুঁকি ৭১-৮২ শতাংশ হ্রাস করে। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বরে গেজেট আকারে প্রকাশিত বিধিমালায় শিশুযাত্রীর জন্য সিটবেল্ট বাঁধা সংক্রান্ত নির্দিষ্ট বিধান কর্তৃপক্ষ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জারির কথা বললেও শিশু আসনের বিষয়ে কোনো বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। উচ্চ গতির যুগে এবং গাড়িতে আটকে থাকা রাস্তা, চালকদের বেপরোয়াতায়, ভ্রমণের সময় শিশুর ঝুঁঁকি বেড়ে যায়। বাংলাদেশের সড়ক ও সড়ক পরিবহন শিশুবান্ধব নয়। শিশুদের জন্য উপযোগী যানবাহন নেই। সেজন্য শিশুদের নিরাপদ পরিবহনের জন্য শিশু উপযোগী সুরক্ষিত আসন অত্যন্ত জরুরি।

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ শিশুদের সুরক্ষিত আসন নিয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। অথচ আমাদের দেশের যানবাহনে শিশু আসন জরুরি। তাই শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে যানবাহনে (বিশেষ করে ছোট গাড়িতে) শিশু সুরক্ষিত আসন প্রচলনে আইন আবশ্যক। পাশাপাশি সড়ক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের ঘোষিত ‘সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ’ অনুযায়ী একটি আলাদা আইন প্রণয়নের দাবি ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের। কারণ বর্তমান আইনটি সম্পূর্ণরূপে মোটরযান সংক্রান্ত আইন যেখানে সড়ক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি অনুপস্থিত রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত