ঢাকা ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মৎস্য খাতে জাতীয় পদক প্রদান

দেশে মৎস্য খাতে নীরব বিপ্লব হচ্ছে : স্পিকার

দেশে মৎস্য খাতে নীরব বিপ্লব হচ্ছে : স্পিকার

সরকারের নীতিসহায়তাসহ নানান ধরনের উদ্যোগের কারণে মৎস্য খাতে নীরব বিপ্লব হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, মৎস্য খাতে এত যে উন্নতি ও সমৃদ্ধি, তা কিন্তু এমনি এমনি হয়ে যায়নি, বরং পরিকল্পিত কাজের জন্যই হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানী ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ১৯৭২ সালে মৎস্য সেক্টরে দূরদর্শিতার পরিচয় দেন বঙ্গবন্ধু। তিনি মৎস্য খাতের উন্নয়নে ১৯৭৩ সালে গণভবনে মাছের পোনা অবমুক্ত করে সামাজিক আন্দোলনের প্রবর্তন করেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৎস্যচাষি, জেলেদের উন্নয়নে কাজ করেছেন। বদ্ধ ও উন্মুক্ত জলাশয়ে মছের চাষ, নদী ও সমুদ্রে মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরনের নীতিসহায়তা দিয়েছেন। ফলে দেশে মৎস্য খাতে নীরব বিপ্লব হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আজকে মৎস্য সেক্টর লাভবান সেক্টরে পরিণত হয়েছে। জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য খাতের অবদান বিবেচনায় এনে দেশের মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে একদিকে উন্মোচিত হয়েছে নতুন কর্মক্ষেত্র। হ্রাস পাচ্ছে বেকারত্ব। অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। পুষ্টি চাহিদা পূরণ হচ্ছে। রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, আমাদের এবারের মৎস্য সপ্তাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট ফিশারিজ তৈরি করা। এর জন্য মাছের বহুমুখীকরণে আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করে কাজ করা হচ্ছে। মৎস্য খাতে বর্তমানে যে অনুদান, প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, তা শেখ হাসিনার সরকার ছাড়া অন্য কেউ এতটা দেয়নি। আমরা নিজেদের চাহিদা পূরণ করে বিশ্বের ৫২টি দেশে মাছ রপ্তানি করছি। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক অর্থ আয় করা সম্ভব হচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, কিছু দুষ্টু মানুষের লোভের কারণে মাছের বৈদেশিক বাজার নষ্ট হয়েছিল। তারা আয়রণসহ নানান ধরনের খারাপ জিনিস ঢুকিয়ে দিয়েছিল। বর্তমানে বিদেশে মাছ রপ্তানি ও বিদেশ থেকে মাছ, মাছের খাবারসহ অন্যান্য পণ্য আনলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে তিনটি আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ বলেন, দেশে চার শতাধিক মৎস্য অভয়াশ্রম তৈরি করা হয়েছে। চাষি পর্যায়ে রোগমুক্ত চিংড়ি পোনা বিতরণে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। তবে আমাদের উপজেলা ও মাঠ পর্যায়ে মৎস্যচাষিদের কাছে প্রযুক্তি পৌঁছানোর লোকবলের অভাব রয়েছে।

প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও মৎস্য ক্ষেত্রে উল্লেখ্যযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার জাতীয় মৎস্য পদক-২০২৩ প্রদান করেছে। এ বছর নির্ধারিত ৯টি ক্ষেত্রের মধ্যে আটটি ক্ষেত্রে আটটি স্বর্ণ, সাতটি ক্ষেত্রে সাতটি রৌপ্য ও ছয়টি ক্ষেত্রে ছয়টি ব্রোঞ্জ পদক প্রদান করা হচ্ছে। স্বর্ণপদক পাওয়া প্রত্যেককে ১৮ ক্যারেট মানের ১৫ (পনেরো) গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণের মেডেল, সম্মাননা সনদ ও নগদ ৫০ হাজার টাকা, রৌপ্যপদক পাওয়া প্রত্যেককে ৫০ গ্রাম ওজনের একটি রুপার মেডেল, সম্মাননা সনদ ও নগদ ৩০ হাজার টাকা এবং ব্রোঞ্জপদক পাওয়া প্রত্যেককে ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি ব্রোঞ্জের মেডেল, সম্মাননা সনদ ও নগদ ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।

এদিকে জাতীয় মৎস্য পদক পেয়েছে ২১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। মৎস্য ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এই পদক দেওয়া হয়েছে।

গতকাল স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রত্যেকের হাতে পদক ও সনদ তুলে দেন। এ বছর নির্ধারিত ৯টি ক্ষেত্রের মধ্যে আটটি ক্ষেত্রে আটটি স্বর্ণ, সাতটি ক্ষেত্রে সাতটি রৌপ্য ও ছয়টি ক্ষেত্রে ছয়টি ব্রোঞ্জপদক প্রদান হয়েছে। স্বর্ণপদক প্রাপ্ত প্রত্যেককে ১৮ ক্যারেট মানের ১৫ (পনেরো) গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণের মেডেল, সম্মাননা সনদ ও নগদ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া, রৌপ্যপদক প্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ গ্রাম ওজনের একটি রুপার মেডেল, সম্মাননা সনদ ও নগদ ৩০ হাজার টাকা এবং ব্রোঞ্জপদক প্রাপ্ত প্রত্যেককে ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি ব্রোঞ্জের মেডেল, সম্মাননা সনদ ও নগদ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। মৎস্য পদক ঘোষণা করেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক।

স্বর্ণপদক প্রাপ্তরা হলেন- ১. মাছের গুণগতমানের রেণু উৎপাদন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় স্বর্ণপদক পেয়েছে বগুড়ার শেরপুরের মেসার্স মাইজ ভান্ডারী মৎস্য খামার।

২. মাছের গুণগতমানের পোনা উৎপাদনের জন্য স্বর্ণপদক পেয়েছেন গাজীপুর কাপাসিয়ার ছোয়া ফিশারিজ অ্যান্ড হ্যাচারিজ।

৩. মৎস্য উৎপাদনে স্বর্ণপদক পেয়েছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার সুখবিলাস ফিশারিজ অ্যান্ড প্লানটেশন।

৪. গুণগতমানের বাগদা চিংড়ি পিএল উৎপাদনের জন্য স্বর্ণপদক পেয়েছে কক্সবাজার উখিয়ার নিউ রয়েল শ্রীম্প হ্যাচারি। ৫. গলদা চিংড়ি উৎপাদনের জন্য স্বর্ণপদক পেয়েছে খুলনার রায়হান অ্যাগ্রো ফিসারিজ।

৬. মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজারজাতকরণ, রপ্তানিতে ও মৎস্যজাত পণ্য বহুমুখীকরণে স্বর্ণপদক পেয়েছে খুলনা ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্ট লি.।

৭. মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে স্বর্ণপদক পেয়েছে পিরোজপুর ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জেলা টাস্কফোর্স।

৮. মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হিসেবে স্বর্ণপদক পেয়েছেন ভোলা জেলার মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ।

রৌপ্যপদক প্রাপ্তরা হলেন- ১. মাছের গুণগতমানের রেণু উৎপাদনে রৌপ্যপদক পেয়েছে যশোরের রূপালী ফিশ হ্যাচারি।

২. মাছের গুণগতমানের পোনা উৎপাদনে রৌপ্যপদক পেয়েছে পঞ্চগড় আটোয়ারীর মেহের মৎস্য খামার।

৩. মৎস্য উৎপাদনে রৌপ্যপদক পেয়েছে টাঙ্গাইল সখীপুরের সোনার বাংলা মৎস্য খামার।

৪. গলদা চিংড়ি উৎপাদনে রৌপ্যপদক পেয়েছে কুমিল্লা লাকসামের বাবুল গলদা চিংড়ি খামার।

৫. মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজারজাতকরণ, রপ্তানিতে ও মৎস্যজাত পণ্য বহুমুখীকরণে রৌপ্যপদক পেয়েছে খুলনার ফ্রেশ ফুডস লি.।

৬. মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে রৌপ্যপদক পেয়েছে চাঁদপুরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জেলা টাস্কফোর্স।

৭. মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় রৌপ্যপদক পেয়েছেন মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গলের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারাজুল কবির।

ব্রোঞ্জপদক প্রাপ্তরা হলেন- ১. মাছের গুণগতমানের রেণু উৎপাদনের জন্য ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে ময়মনসিংহ গৌরীপুরের বর্মন মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র (হ্যাচারি)।

২. মৎস্য উৎপাদনে ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে চট্টগ্রাম চন্দনাইশের এ. জে. সি পোলট্রি অ্যান্ড অ্যাগ্রোভেট।

৩. বাগদা চিংড়ি উৎপাদনে ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে খুলনা দাকোপের দুলাল শ্রিম্প ফিশ কালচার।

৪. মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজারজাতকরণ, রপ্তানিতে ও মৎস্যজাত পণ্য বহুমুখীকরণে ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে খুলনার বায়োনিক সীফুড এক্সপোর্টস লি.।

৫. মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে মুন্সীগঞ্জ লৌহজংয়ের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত উপজেলা টাস্কফোর্স।

৬. মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হিসেবে ব্রোঞ্জপদক পেয়েছেন যশোর বাঘারপাড়ার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ বালা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত