ঢাকা ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর

গত অর্থ বছরে ৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়

গত অর্থ বছরে ৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়

দেশের চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় করেছে কাস্টম শুল্ক স্টেশন। এ বন্দরে এ অর্থ বছরে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। মহামারি করোনার বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যেও বন্দরটি সচল থাকায় এ অর্থ আদায় সম্ভব হচ্ছে।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৫৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আদায় হয়েছে ৬৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বেশি আদায় হয়েছে। অর্থ বছরের চলতি জুন মাসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আদায় হয়েছে ১৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় জুনে আদায় বেশি হয়েছে ১২ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আদায় হয়েছিল ৬৪ কোটি ০৭ লাখ টাকা। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বেশি আদায় হয়েছে ২২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থ বছরের জুন মাসে আদায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আদায় হয় ১৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। বিগত বছরের জুন মাসের তুলনায় বেশি আদায় হয়েছে ১৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

২০২২-২৩ অর্থ বছরে জুন মাসে আদায় করা হয়েছে ১৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। গত অর্থ বছরে জুনে আদায় হয়েছিল ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। যা বিগত জুনের তুলনায় ১৩ কোটি ৩২ লাখ আদায় হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আদায় হয় ৬৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। যা ২০২১-২২ অর্থ বছরে আদায় হয়েছিল ৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। গত অর্থ বছরের তুলনায় ২২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বেশি আদায় হয়।

২০২১-২২ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আদায় হয়েছিল ৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আদায়ের পার্থক্য ২৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা কম আদায় হয়েছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ৭২৬ টন ও রপ্তানি হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৭৫ টন পণ্য। ২০২০-২১ অর্থ বছরে আমদানি ১৬ লাখ ৯৩ হাজার ১২০ টন ও রপ্তানি ১ লাখ ১১ হাজার ৫৬৯, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি ১১ লাখ ৮৬ হাজার ৫৮ টন ও রপ্তানি ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৯০ টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬৯ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ১২ লাখ ৭ হাজার ৩২৩ টন ও রপ্তানি ৬৯ হাজার ২০৫ টন ও ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এই বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ৬৫৬ টন পণ্য এবং রপ্তানি হয়েছে ৭ হাজার ৫১ টন পণ্য।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারি করোনায় বৈশ্বিক মন্দা, ডলার সংকট, এলসি জটিলতা, বন্দর অভ্যন্তরে প্রয়োজন অনুযায়ী অবকাঠামো গড়ে না ওঠা ও বিভিন্ন সময় ভারত থেকে উল্লেখযোগ্য হারে পণ্য আমদানি কমে গেলেও বন্দরটিতে উল্লেখযোগ্য হারে রাজস্ব আদায় বেড়েছে। বছরজুড়ে ডলার সংকট, এলসি জটিলতা ও পণ্য আমদানি ধীরগতি সমস্যা না থাকলে এ বন্দরে দ্বিগুণ রাজস্ব আদায় হতো। বাংলাবান্ধা বন্দরের তথ্যমতে, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে ঐতিহাসিক মৈত্রী চুক্তির মাধ্যমে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সম্ভাবনার বীজ রোপিত হয়। ১৯৯৭ সালে ১ সেপ্টেম্বর নেপাল এবং ২০১১ সালে ভারতের সঙ্গে শুরু হয় ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম। ২০১৬ সালে এ বন্দরের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন চালু হয়। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি ভুটান থেকে পাথর আমদানির মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্থলবন্দরের সঙ্গে চতুর্দেশীয় ব্যবসা কার্যক্রম। বিপুল পরিমাণ রাজস্বও আয় হচ্ছে এই বন্দরের মাধ্যমে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ভারত থেকে পাথর, মেশিনারিজ, প্লাস্টিক দানা, ভুট্টা, অয়েল কেক (খৈল), আদা, গম, চাল, ফল ইত্যাদি ও নেপাল ও ভুটান থেকে উৎপাদিত ও বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। একইভাবে দেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য, আলু, ব্যাটারি, কোমল পানীয়, গার্মেন্টসামগ্রী, ক্যাপ, হ্যাঙ্গার, সাবান, বিস্কুট, চানাচুর, জুস, কাচ, পার্টস, কটনব্যাগ, ওষুধ, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন দ্রব্য রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাবান্ধা সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম জানান, মহামারি করোনাকাল থেকেই উচ্চ শুল্ক হারের পণ্য আমদানি কমে গেছে। তাছাড়া এ স্থলবন্দর থেকে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব বেশি হওয়ায় খরচ বেশি বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে পণ্যের খরচ বেশি পড়ে যায়। এসব সমস্যা নিরসন হলে বন্দরটিতে লক্ষ্যমাত্রার থেকে দ্বিগুণ রাজস্ব আদায় সম্ভব।

বাংলাবান্ধা আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন জানান, করোনার মধ্যেও বাংলাবান্ধা বন্দরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে দ্বিগুণ রাজস্ব আয় হয়েছে। করোনার পর বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে মন্দা, ডলার সংকটসহ সৃষ্ট কিছু সমস্যা তৈরি হলেও বন্দরটিতে ভালো রাজস্ব আদায় হয়েছে। বন্দরের অবকাঠামোসহ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য মহাপরিকল্পনা প্রয়োজন। সেটি পূরণ হলে সম্ভাবনাময়ী এ বন্দর দিয়ে শতশত কোটি টাকার রাজস্ব আদায় সম্ভব।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা একটি চারদেশীয় গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাবান্ধা বন্দরে অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ফলে বন্দরটিতে আমদানি-রপ্তানিতে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। প্রতিদিন ৩০০-এর বেশি বন্দরটিতে আমদানি-রপ্তানির পণ্যবাহী ট্রাক সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে যাতায়াত করছে। এ বন্দরে প্রধান আমদানি হচ্ছে পাথর। ভুটান ও ভারত থেকে এই পাথর আমদানি করা হয়। পাথর ছাড়াও গম, ভুট্টা, গমের ভুসি, প্লাস্টিক দানা, আদা, অয়েল কেক (খৈল), চাল, প্রসাধনী কাজে ব্যবহৃত মেটেরিয়ালস আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে। তাই বন্দরটিতে রাজস্ব আয় হচ্ছে। করোনাকালেও দ্বিগুণ রাজস্ব আদায় হয়েছে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার জেএম আলী আহসান সাংবাদিকদের জানান, শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, দক্ষতা ও বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার কারণে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়েছে। তারা আরো বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই এ স্থলবন্দরটি অপার সম্ভাবনাময়। ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হলে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর হিসেবে এখান থেকে জাতীয় রাজস্ব আয়ে যোগ হবে নতুনমাত্রা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত