ঢাকা ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রসালো আখে ফরিদ মিয়ার মিষ্টি হাসি

অন্য ফসলের তুলনায় লাভ কয়েকগুণ বেশি
রসালো আখে ফরিদ মিয়ার মিষ্টি হাসি

আখ চাষ শুরুতে কয়েকমাস দিন-রাত ধরে পড়ে ছিলেন আখের ক্ষেতে। আখের প্রতিটি লাইন যেন চাষি ফরিদ মিয়ার এক একটি স্বপ্ন! কয়েকদিন পরে বাজারে তোলা হবে ফরিদ মিয়ার রসালো দেশি জাতের আখ। আখ, আখের রস, চিনি সুস্বাদু ও মিষ্টি জাতীয় একটি খাবার। সুস্বাদু এ খাবারটি দেশের সব জেলার মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয়। আখ চাষাবাদের উপযোগী মাটি, নদীর পাড়ে এবং হওয়ায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পৌরসভার ইছামতী নদীর পাড়ে ঘাটচেক এলাকাজুড়ে আখ চাষ হয় চোখে পড়ার মতো। অন্যান্য ফসলের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি লাভবান হওয়ায় যুগ যুগ ধরে আখ চাষ করেছেন ওই এলাকার কৃষকরা। রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পৌরসভা ৭নং ওয়ার্ডের মুরাদ নগর এলাকায় দেশি আখের সুমিষ্ট রসে আখ চাষ করে লাভের আশা করছেন কৃষক ফরিদ মিয়া। একই উপজেলায় আখ চাষে লাভবান হচ্ছেন আরো অনেক কৃষক। একেকজন চাষি লাখ টাকার ওপর আয় করছেন। রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘাটচেক, পদুয়া, শিলক, পারুয়া, রাজার হাট, বাঙ্গাল হালিয়া, সরফভাটাসহ বেশ কিছু জায়গায় এ আখ চাষ করা হয়েছে। এতে উপজেলার কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে এবার দেশি জাতের আখের আবাদ করেছেন। উপজেলার ঘাটচেক, পদুয়া, শিলক, পারুয়া, রাজার হাট, বাঙ্গাহালিয়া, সরফভাটা, ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় দেশি আখের আবাদ করা হয়েছে। দিন দিন রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় আখের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আখ চাষে লাভবান হওয়ায় কৃষকরা এই চাষাবাদে ঝুঁকছে বেশি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাঠে প্রান্তরে গিয়ে দেখা যায়, হিমেল হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দুলছে সারি সারি সুমিষ্ট আখ। দেশি জাতের বলে রং উজ্জ্বল হালকা হলুদ রংয়ের হয়। কমপক্ষে ১২ থেকে ১৩ ফিট লম্বা মাঝারি মোটা আখগুলো সারিবদ্ধভাবে সোজা দাঁড়িয়ে আছে। নুইয়ে পড়া ঠেকাতে প্রত্যেক সারির মাঝেমধ্যে বাঁশের শক্ত খুঁটিতে মোটা দড়ি বাঁধা।

মুরাদনগর এলাকার কৃষক ফরিদ মিয়া বলেন, আখের চারা লাগানো পরে এক বছর পর এই আখ খাবার উপযোগী হয়। ভাদ্র মাসের শুরুর দিকে আখ তোলা হয় বাগান থেকে। এই আখ বড় করতে সার, ফসফেট, গোবর, ছাই ব্যবহার করা হয়। আখ চাষে তেমন কোনো খরচ না থাকায় চাষিরা লাভবান হচ্ছে বেশি।

তিনি আরো জানান, আখ চাষ করে তিনি মহাখুশি। অন্যান্য বার থেকে এইবার প্রথম আখ চাষ করে অনেক লাভবান হচ্ছি। মাত্র ২ শতক জমির ওপর আখ চাষ করতে খরচ পড়েছে ৫০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, এক লাখ টাকার মতো আখ পাইকারি দরে বিক্রির কথাবার্তা হচ্ছে। বিক্রয় করে আরো প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো আখ বাগানে থাকবে। সামনে হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে তিনি বাকি আখগুলো ভালো দামে বিক্রির আশায় করেছেন।

রাঙ্গুনিয়ার উপজেলার কৃষি কার্যলায় সূত্রে জানা যায়, একটি জমিতে বছরে একবার আখ চাষ করা যায়। আখ চাষের পর ওই জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসলের চাষ করে পরের বছর আবার আখ চাষ করতে হয়। অর্থাৎ একই জমিতে বারবার আঁখ চাষ করা যায় না। করলে ফলন হয় না। এই বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায, রাঙ্গুনিয়ায় সবজি থেকে আখের ভালো ফলন হয়। বর্তমানে রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে আখের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন বেশি। আখের দুই ধরনের রোগ দেখা দেয়। লালচে ও রেখা রোগ। পাশাপাশি মাজরা পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারলে আখের ভালো ফলন হয়। তাই সঠিক পরিমাণে সার, পানি ও প্রতিনিয়ত পরিচর্যা করলে এখানকার কৃষকরা ভালো লাভবান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত