উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড বীজের প্রভাবে কুষ্টিয়াসহ তিন জেলায় বিপুল পরিমাণ আমন বীজ অবিক্রিত অবস্থায় গোডাউনে পড়ে আছে। আমন বীজ রোপণ করার সময় পার হয়ে যাওয়ায় এসব বীজ আর বিক্রি সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন বিএডিসির কর্মকর্তা, বীজ ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, হাইব্রিজ বীজের আধিপত্যসহ নানা কারণে এবার আমন গত বছরের তুলনায় কম হচ্ছে বলে মনে করছে বিএডিসি। গত বছর আমন বীজ অবিক্রিত না থাকলেও এবার তার উল্টো। বিপুল পরিমাণ বীজ পড়ে আছে গোডাউনে। অনেক ব্যবসায়ী বিক্রির আশায় বীজ উত্তোলন করলেও লাখ লাখ টাকার বীজ পড়ে আছে তাদের গোডাউনে। এ অবস্থায় বড় ধরনের লোকসানে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। তবে কৃষি বিভাগ বলেছে, বিএডিসির বীজ বিক্রি না হলেও আমন আবাদে কোনো প্রভাব পড়বে না। কৃষকদের ঘরেই প্রচুর বীজ আছে। তারা হাইব্রিড আবাদে ঝুঁকছে।
কুষ্টিয়া শহরের কলেজ মোড়ে রিপন সীড স্টোর। রিপন সীড স্টোরের মালিক আবু মনি জুবায়েদ রিপন। তিনি বিএডিসি সার ও বীজ অ্যাসোসিয়শনের সাধারণ সম্পাদক। তিনি চলতি আমন মৌসুমে অতি আশানুরূপ আমন বীজ বিক্রি করতে পারেননি। তার তিনটি গোডাউনে প্রায় ৭০ মেট্রিক টন বীজ অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। এ ধান আর বীজ হিসেবে বিক্রি করা সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি। পাশাপাশি খাদ্য হিসাবে বিক্রিতে লোকসানে বিক্রি করতে হতে পারে বলেও মনে করছেন তিনি। এমনটা হলে তার লোকসান হবে অনেক টাকা।
বিএডিসির উপ-পরিচালক (বীজ) আবদুর রহমান বলেন, তিন জেলায় এবার গতবারের তুলনায় কম বীজ বিক্রি হয়েছে। এখনো আমাদের গোডাউনে বিপুল পরিমাণ বীজ পড়ে আছে। এগুলো বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা কম। খুলনা বিভাগে এবার বৃষ্টিপাত অনেক কম হওয়ার পাশাপাশি হাইব্রিড বীজের চাহিদার কারণে এবার বীজ বিক্রি কমেছে। আমরাও বিক্রি বাড়াতে হাইব্রিড বীজের চাহিদার বিষয়টি জানিয়েছি। এসব বীজ বিক্রি না হলে খাদ্য হিসেবে বিক্রি করা হয় অনেক সময়। সেখানে সরকারের লোকসান হয়।’ মেহেরপুরের ব্যবসায়ী আরমান আলী বলেন, তিন কারণে এবার আমন বীজ বিক্রি হয়নি। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাট কাটতে পারছে না কৃষক, এ কারণে অনেক কৃষক আমান আবাদে যেতে পারছেন না। আবার হাইব্রিড বীজ বড় একটি কারণ। তার ঘরে ২৫ টন বীজ পড়ে আছে। বিশাল লোকসানে পড়েছেন বলে জানান তিনি।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, হাইব্রিড বীজ দেশীয় বীজের ব্যবসা পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজন এসব জেনেও চুপচাপ বসে আছে। তারা বিএডিসিকে ধ্বংস করতে বেসরকারি ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দিচ্ছে। এ কারণে এবার সারা দেশে বীজ অবিক্রিত হয়ে পড়ে আছে। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও লোকসানের মুখে পড়বেন। কৃষক হাইব্রিড বীজ সংরক্ষণ করলে আগামীতে বিক্রি আরো কমতে পারে।
কুষ্টিয়া খামার বাড়ির উপ-পরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, কুষ্টিয়া অঞ্চলে ব্রি ধান ৩৩, ৩৯, ৪৯ ও স্বর্ণা জাতের ধানের আবাদ কমেছে। সেখানে নতুন জাতের উচ্চফলন শীল ব্রি ধান ৭১, ৮৭, ৮০ ও৭৫ আবাদ বেড়েছে। আগের জাতগুলোর জীবনকাল বেশি হওয়ার পাশাপাশি ফলন কম হওয়ান নতুন জাতগুলোতে কৃষক ঝুঁকছে। তারা এসব জাত আবাদ করে প্রতি বিঘা ২ থেকে ৪ মণ পর্যন্ত বেশি ফলন পাচ্ছে।
আর বৃষ্টিপাত কম হলেও কৃষক বসে নেই, ধানের জীবনকাল ছিল ১৫০ দিন এখন সেটা ১১৫ থেকে ১২০ দিন। তাই আষাঢ়ে আমন আবাদ না করে কৃষকদের শ্রাবণ মাসের পুরোটা জুড়ে আমন রোপণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। জিকের পাম্প নষ্ট থাকায় পানির কিছুটা সংকট থাকলেও বিকল্প উপায়ে কৃষক আমন রোপণ করছেন। উৎপাদনে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।