দীর্ঘ ৯ বছর প্রতীক্ষার পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রাথমিকের শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের আক্ষেপের অবসান হলো। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি) সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল লক্ষ্মীপুরের তিন উপজেলায় ২০১ জন শিক্ষককে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অন্য জেলাগুলোতেও পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি দেওয়া শুরু হবে।
গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৯ মার্চ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। ফলে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি চলে যায় পিএসসির অধীনে। নিয়োগ বিধিমালা, সহকারী শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতাসহ নানা কারণে পদোন্নতি বন্ধ হয়ে যায়। ৯ বছরের বেশি সময় পর লক্ষ্মীপুরের ২০১ শিক্ষককে পদোন্নতির মাধ্যমে সেই পদোন্নতি জট খুলল। এদিকে গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর ও রায়পুর উপজেলার ২০১ জন সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদে (গ্রেড-১১, বেতনক্রমণ্ড১২৫০০-৩০২৩০ টাকা) পদোন্নতির আদেশ জারি করেছে। পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের আগামী ৮ আগস্ট লক্ষ্মীপুর জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে যোগদান করতে হবে। এর মধ্যে কেউ যোগদান করতে ব্যর্থ হলে তিনি পদোন্নতি যোগ্য নন বলে গণ্য হবেন এবং তার পদোন্নতির আদেশ বাতিল হবে। যোগদানের পর দুই কার্যদিবসের মধ্যে যোগদান করা শিক্ষকদের পদায়ন করা হবে। এক্ষেত্রে চলতি দায়িত্ব-ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োজিত পদোন্নতিপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কর্মরত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদেই পদায়ন করতে হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পদোন্নতি-সংক্রান্ত জটিলতার নিরসন হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়। এতে বলা হয়, মামলা ছাড়াও সারাদেশের সহকারী শিক্ষকদের গ্রেডেশন তালিকা চূড়ান্ত করা নিয়ে বড় ধরনের জটিলতা ছিল। কারণ বিষয়টি ছিল জটিল ও সময়সাপেক্ষ। এ সমস্যা উত্তরণে ‘সমন্বিত গ্রেডেশন ব্যবস্থাপনা’ নামে একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়। এরপরই ডিজিটাল পদ্ধতিতে চূড়ান্ত হয় গ্রেডেশন লিস্ট।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ১৮ হাজারের বেশি সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। তিন ধাপে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও জাতীয়করণ করা হয়েছে। যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই, সেখানেও সহকারী শিক্ষকদের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চলতি দায়িত্ব নিয়েও নানা সমস্যা রয়েছে। অনেক সহকারী শিক্ষক নিজের সুবিধামতো স্কুলের দায়িত্ব না পেয়ে চলতি দায়িত্বও নেননি। তারা চলতি দায়িত্ব নিতে অপারগতা লিখিতভাবে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন, যা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হয়। তবে পদোন্নতি প্রক্রিয়ার জট খোলায় এ সংকট শিগগির কেটে যাবে।
অন্যদিকে ২০১৯ সালে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়োগ বিধিমালা’ প্রণয়ন করা হয়। এ বিধিমালায় বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষকের ৬৫ শতাংশ পদ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৩৫ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। তবে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া যাবে। সহকারী শিক্ষক হিসেবে কমপক্ষে সাত বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি বিবেচনায় আসবে। আর সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে সরাসরি। নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী- বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্ত উত্তীর্ণদের মধ্যে থেকে নন-ক্যাডার পদে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করে আসছে পিএসসি। কিন্তু ২৩ ভাগে বিভক্ত শিক্ষকদের মামলার কারণে প্রধান শিক্ষকের ৬৫ শতাংশ শূন্যপদে পদোন্নতি আটকে যায়। শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় বাধ্য হয়ে ২০১৭ সাল থেকে উপজেলাভিত্তিক জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ব দিয়ে আসছিল।