সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ জায়া অধ্যাপক পান্না কায়সার আর নেই। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী। গতকাল সকালে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পান্না কায়সার ১৯৫০ সালের ২৫ মে কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার পয়ালগাছা চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। ১৯৬৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শহীদুল্লাহ কায়সারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সেদিন ঢাকা শহরে কারফিউ ছিল। পুরো দেশ তখন গণআন্দোলনে উত্তাল। শহীদুল্লাহ কায়সারের হাত ধরে শুরু করে তার প্রায় সাড়ে চার দশকের পথচলা আধুনিক সাহিত্যের সঙ্গে, বাঙালি সংস্কৃতি আর প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা শহীদুল্লাহ কায়সারকে তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর তিনি আর ফেরেননি। এরপর পান্না কায়সার একা হাতে বড় করে তুলেন তার দুই সন্তান শমী কায়সার এবং অমিতাভ কায়সারকে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ, অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণে শহীদ জায়া অধ্যাপক পান্না কায়সারের অবদান অপরিসীম। সংসার জীবনে আবদ্ধ না থেকে পান্না কায়সার দায়িত্ব নিয়েছেন লাখো কোটি শিশু-কিশোরকে সোনার মানুষে পরিণত করার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত দেশের বৃহত্তম শিশু-কিশোর সংগঠন ‘খেলাঘর’ এর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন ১৯৭৩ সালে। ১৯৯০-তে তিনি এই সংগঠনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলা’ খেলাঘরের মাধ্যমে এই স্লোগান সারা দেশের শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারেও সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।
তিনি বাংলাদেশের একজন ঔপন্যাসিক, গবেষক ও ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। এই শহীদ জায়া শিক্ষকতা করেছেন বেগম বদরুন্নেসা কলেজে। তিনি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। আগামীকাল সকাল সাড়ে ১০টায় সর্বস্তরের নাগরিকদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য অধ্যাপিকা পান্না কায়সারের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে এবং বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে তৃতীয় জানাজার পর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে সমাহিত করা হবে।
রাষ্ট্রপতির শোক : রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বিশিষ্ট লেখক, সমাজসেবক, শিশু সংগঠক ও সাবেক সংসদ সদস্য পান্না কায়সারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
গতকাল এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য হিসেবে পান্না কায়সারের অবদান জাতি চিরদিন স্মরণ করবে। রাষ্ট্রপতি তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর শোক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পান্না কায়সারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
গতকাল এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
নির্মূল কমিটির শোক: অধ্যাপিকা পান্না কায়সারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। গতকাল সংগঠনের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক শোক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় তার আকস্মিক মৃত্যুতে আমরা অত্যন্ত শোকাভিভূত।
‘মুক্তিযুদ্ধে দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারকে হারানোর পর শহীদ জায়া পান্না কায়সারকে এক কঠিন সংগ্রামের ভেতর কাল অতিবাহিত করতে হয়েছে।
‘অধ্যাপিকা পান্না কায়সারের আকস্মিক মৃত্যুতে আমাদের প্রগতিশীল সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতৃত্বে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
তথ্যমন্ত্রীর শোক : শহীদ জায়া অধ্যাপক পান্না কায়সারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। শোকাহত মন্ত্রী প্রয়াতের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
সম্প্রচারমন্ত্রী তার শোকবার্তায় বলেন, ‘পান্না কায়সার ছিলেন প্রজ্ঞা আর প্রাণশক্তির অনন্য উদাহরণ। শহীদ জায়া পান্না কায়সারের মৃত্যুতে দেশ একজন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, লেখক ও নিবেদিতপ্রাণ শিশু সংগঠককে হারালো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগামী প্রজন্ম গড়ে তোলার কারিগর পান্না কায়সার তার কর্ম ও গবেষণার মধ্য দিয়ে আমাদের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন।’
জাতীয় পার্টির শোক: পান্না কায়সারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এবং জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি। গতকাল এক বার্তায় জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এই শোক প্রকাশ করা হয়।
নেতৃবৃন্দ পান্না কায়সারের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোকবার্তায় জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের আত্মত্যাগ ও পান্না কায়সারের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।