মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বিওসি টিলা ক্যাম্প বিজিবির সদস্যরা অভিযান চালিয়ে পাঁচটি চোরাই মহিষ আটক করলেও পরে তা জনপ্রতিনিধির সুপারিশে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার সময় সীমান্ত থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পানিধার এলাকা থেকে মহিষগুলো আটক করে বিজিবি। আটকের পর অভিযানে থাকা বিজিবির এক কর্মকর্তা মহিষগুলো চোরাই বলেও স্বীকার করেন।
এলাকার স্থানীয়দের অভিযোগ, মহিষগুলো আটকের ঘন্টাখানেক পর এক জনপ্রতিনিধিকে ব্যবহার করে চোরাকারবারিরাই বিজিবির কাছ থেকে মহিষগুলো ছাড়িয়ে নিয়েছে। অবশ্য বিজিবি বলছে, একজন জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়নে মহিষগুলোর মালিকানা (গৃহপালিত) দাবি করায় তা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ওই জনপ্রতিনিধির নাম জানায়নি বিজিবি। এদিকে চোরাই মহিষ আটকের পর জনপ্রতিনিধির প্রত্যেয়নে ছেড়ে দেওয়ায় তা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রায় সীমান্ত থেকে এলাকা থেকে চোরাই মহিষ আটক করা হলেও কৌশলে বিজিবির কাছ থেকে তা ছাড়িয়ে নেয় চোরাকারবারিরা। ফলে মহিষ পাচার ঠেকানো যাচ্ছে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৩টার সময় ভারতীয় চোরাই মহিষের একটি চালান পাচারের উদ্দেশ্যে চোরাকারাবারিরা বড়লেখা থেকে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের (বিয়ানীবাজার) আওতাধীন বিওসি টিলা ক্যাম্প বিজিবির সদস্যরা অভিযান চালায়। এসময় সীমান্ত থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বড়লেখা পৌরসভার পানিধার এলাকা থেকে পাঁচটি মহিষ আটক করে বিজিবি। পরে বিজিবি সদস্যরা মহিষগুলো কাঠালতলী বাজারের দিকে নিয়ে যায়। এসময় বিজিবির সার্জেন্ট পরিচয় দিয়ে জিল্লুর নামে বিজিবির এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, মহিষগুলো চোরাই। আমরা সোর্স লাগিয়ে আটক করেছি। পাহাড়ে আরও কয়েকটি মহিষ আছে। এসময় স্থানীয় লোকজন ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন। বিজিবি ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, আটক মহিষগুলো লুৎফুর ও সুনাম নামে দুই চোরাকারবারির। এদিকে বিজিবির আটকের এক ঘণ্টার মধ্যে এক জনপ্রতিনিধির প্রত্যেয়নে মহিষগুলো মালিকানা দাবি করে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। সূত্র জানিয়েছে, চোরাকারবারিরাই ওই জনপ্রতিনিধিকে ব্যবহার করে মহিষগুলো ছাড়িয়ে নিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, চোরাকারবারিরা বেশ কয়েকটি ভারতীয় মহিষ পাচারের উদ্দেশ্য সীমান্তের ওপার থেকে নিয়ে আসে। তবে বিজিবি মাত্র পাঁচটা মহিষ আটক করেছে। বাকি মহিষগুলো চোরাকারবারিরা কৌশলে সরিয়ে নিয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানা যায়, মহিষপাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ডিমাই-পাখিয়ালা সড়ক ব্যবহার করছে চোরাকারবারিরা। প্রায় প্রতিদিনই প্রকাশ্যে মহিষ পাচার করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, মাঝেমধ্যে সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল দল গরু-মহিষ উদ্ধার করলেও চোরাকারবারিরাই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে গরু-মহিষ ও চোরাই পণ্য পাচার বন্ধ হচ্ছে না।
স্থানীয় এক ব্যক্তি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, মহিষগুলো কারও গৃহপালিত হলে বিজিবি তা আটক করবে কেন? যদি তা চোরাই না হয় তবে বিজিবি গৃহপালিত মহিষ এভাবে হয়তো অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আটক করেছে। যার কারণে জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়নে ছেড়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিজিবির বিওসি টিলা ক্যাম্পের কমান্ডার সুবেদার মো. সিরাজুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, বিজিবি পাঁচটি মহিষ আটক করেছিল। পরে এক জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়নে মহিষগুলো মালিকানা (গৃহপালিত) দাবি করায় তা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মহিষগুলো চোরাই ছিল (আপনার এক কর্মকর্তার বক্তব্য মতে) এবং চোরাকারবারিরাই তা ছাড়িয়ে নিয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিজিবি সদস্যরা কোনো অনৈতিক কাজ করে না। তবে কোনো জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়নে মহিষগুলো ছেড়েছেন- এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি সংযোগ কেটে দেন। বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের (বিয়ানীবাজার) অধিনায়ক লে. কর্নেল মুহিব্বুল ইসলাম খানের মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তা রিসিভ করেননি তিনি।