বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিনকে ১৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিভিন্ন জটিলতার কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধীনে এলএলবি পরীক্ষার সনদ দেরিতে পাওয়া যশোর সদরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মুন্সি মহিউদ্দিন আহমেদকে ১৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মহিউদ্দিন আহমেদের রিটে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে এ রায় দেন বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ। আদেশের অনুলিপি পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে এ টাকা দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে মহিউদ্দিন আহমেদের রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম শামসুল হক। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সাইফুল ইসলাম উজ্জ্বল। রাবির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন।
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম উজ্জ্বল জানান, মহিউদ্দিন আহমেদ এখন পক্ষাঘাতগ্রস্ত। কিন্তু তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কেটেছে শিক্ষা সনদের জন্য আইনি লড়াই করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবহেলা, উপেক্ষার কারণেই তাকে এ লড়াইয়ে নামতে হয়েছিল। উচ্চ আদালত মহিউদ্দিন আহমেদকে ১৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আদেশের অনুলিপি পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে তা দিতে বলা হয়েছে। দিতে ব্যর্থ হলে ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক সুদ দিতে হবে বলেও আদেশে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত রিট আবেদন থেকে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত যশোরের শহীদ মশিউর রহমান কলেজে এলএলবিতে ভর্তি হন। ২ বছর মেয়াদি পাস কোর্সে ১৯৮৮ সালে চূড়ান্ত পরীক্ষায় পরীক্ষা দেন মহিউদ্দিন আহমেদ। পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হলে মহিউদ্দিন আহমেদ অকৃতকার্য হন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ‘দেওয়ানী কার্যবিধি এবং তামাদি আইন’ বিষয়ে ২৫ নম্বরের মধ্যে ২৪ পেয়েছেন। ১ নাম্বারের জন্য তাকে অকৃতকার্য হওয়ায় তিনি এ বিষয়ের উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে জানায় উত্তরপত্র বিক্রি হয়ে গেছে। পরে ওই বছরের শেষ দিকে তিনি যশোরের সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানি মামলা করেন। ১৯৯০ সালের ১৯ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দিয়ে রায় দেন আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে ১৯৯১ সালে যশোরের জেলা জজ আদালতে আপিল করে রাবি কর্তৃপক্ষ। ১৯৯৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাবির আপিল খারিজ করে দেন আদালত। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে (সিভিল রিভিশন) হাইকোর্টে আবেদন করে রাবি। ৬ বছর পর ১৯৯৯ সালে হাইকোর্ট রাবির সিভিল রিশিশনটি খারিজ করে দিয়ে জেলা জজ আদালতের রায় বহাল রাখেন। এ রায়ের পর রাবি কর্তৃপক্ষ এলএলবির চারটি বিষয়ের উত্তরপত্রে মহিউদ্দিন আহমেদের প্রাপ্ত নম্বর গড় করে মহিউদ্দিনকে কৃতকার্য দেখায়। ২০০১ সালে তাকে এলএলবির সনদও দেয়া হয়। এরপর মহিউদ্দিন আহমেদ ২০০২ সালের ২২ জুন রাবি কর্তৃপক্ষের কাছে মামলার খরচ ও ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ লাখ টাকা দাবি করে চিঠি দেন। ওই বছরের ২৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে জানায়, হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ তাকে জানানো হবে। এ অবস্থায় মহিউদ্দিন আহমেদ আইনজীবী তালিকাভুক্তিকরণ পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে যশোর বারে আইন পেশায় যুক্ত হন। এর মধ্যে ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মোট পাঁচবার ব্রেইন স্ট্রোক করেন মহিউদ্দিন আহমেদ। কয়েক দফা ব্রেইন স্ট্রোকে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এরপর ক্ষতিপূরণের দাবি নিয়ে বিভিন্ন সময় রাবি কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাড়া না পেয়ে ২০২১ সালে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করেন।
প্রাথমিক শুনানির পর উচ্চ আদালত তার ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে রুল জারি করেন। সেই রুলের ওপর ৩ আগস্ট চূড়ান্ত রায় দেন হাইকোর্ট। দীর্ঘ ৩৫ বছরের আইনি লড়াই শেষে বিজয়ী হয়েছেন যশোর সদরের মাইক পট্টি এলাকার হরিনাথ দত্ত লেনের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মুন্সি মহিউদ্দীন আহমেদ।
রায়ের পর মহিউদ্দিন আহমেদের ছেলে আসিফ শাহরিয়ার সৌম্য বলেন, ‘আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত। সব মিলিয়ে একটা কঠিন সময় পার করছি। আশা করছি, রাবি কর্তৃপক্ষ রায় মেনে নিয়ে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে।’