ঢাকা ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাকি রয়েছে ১০ কিমি. উন্নয়নের নতুন যাত্রা

বাকি রয়েছে ১০ কিমি. উন্নয়নের নতুন যাত্রা

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এ প্রকল্প বর্তমান সরকারের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। প্রায় পুরো অংশ রেললাইনই এখন দৃশ্যমান। এরইমধ্যে শেষ করা হয়েছে ৯০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণকাজ। বাকি ১০ কিলোমিটার রেললাইন খুব দ্রুত নির্মাণ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী মাসের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করার প্রত্যাশা রেলওয়ের। এরপর প্রতীক্ষিত ট্রেন চলাচল শুরু হবে কক্সবাজারে। শুরু হবে বাংলাদেশে রেলওয়ের জন্য নতুন ইতিহাস। রেলওয়ে সূত্র জানায়, পাকিস্তান আমলেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ওই সময় করা হয় ব্যয়বহুল সমীক্ষা। এরপর সেই সমীক্ষা রিপোর্টের আর কোনো হদিস মেলেনি। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর সরকারের আমলে ট্রেনলাইন সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু সরকারের পরবর্তী শাসনামলে ট্রেনলাইন কক্সবাজার পর্যন্ত সম্প্রসারণের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ট্রেনলাইন সম্প্রসারণের জোরেশারে কাজ শুরু হয়। নেয়া হয় হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প। এই প্রকল্প সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর এগিয়ে যেতে থাকে প্রকল্প কাজ।

অগ্রগতি নিয়ে দোহাজারি-রামু-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান জানান, প্রকল্প কাজ অনেকটা শেষ। কিছু কাজ বাকি আছে মাত্র। এই কাজগুলো দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। আগামী মাসের শেষের দিকে এই রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু করার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। প্রকল্প কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, রেললাইন নির্মাণের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। বাকি ১০ কিলোমিটারের মধ্যে দোহাজারিতে তিন, সাতকানিয়ায় দুই ও লোহাগাড়ায় দুই কিলোমিটারসহ আরো কিছু স্থানে রেললাইন স্থাপনের কাজ বাকি আছে। কক্সবাজারে আইকনিক স্টেশনের কাজও শেষ পর্যায়ে। শুধু এ স্টেশনের ফিনিশিংয়ের কাজ বাকি আছে। কাজ সম্পন্ন হয়েছে ছোট-বড় সবক’টি ব্রিজ-কালভার্টের। এসব ব্রিজ কালভার্ট প্রকল্প কাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রকল্পের জন্য প্রায় এক হাজার ৪০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১০০ কিলোমিটার রেলপথে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনসহ মোট স্টেশন থাকছে ৯টি। বাকি আট স্টেশন হলো দোহাজারি, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ ও রামু। এসব স্টেশনের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। এ রেললাইনে সাঙ্গু, মাতামুহুরী, ডলু, ঈদগাঁও ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ছয়টি বড় রেল সেতু। এছাড়া এই রেলপথে নির্মাণ করা হয়েছে ৩৯টি ছোট-বড় সেতু, ২০১টি কালভার্ট এবং ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। এছাড়াও সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে একটি ফ্লাইওভার। রামু, সাতকানিয়া ও কক্সবাজার লিংক রোডে নির্মাণ করা হচ্ছে তিনটি হাইওয়ে ক্রসিং। হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর চলাচলে ৫০ মিটারের একটি ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে নির্মাণ করা হচ্ছে ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন রেলস্টেশন। যা দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশন। কক্সবাজার ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর এই স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এটির নির্মাণকাজ প্রায় ৮৭ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। স্টেশনটিকে সৈকতের ঝিনুকের আদলে তৈরি করা হচ্ছে। স্টেশন ভবনটির আয়তন এক লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট। ছয়তলা ভবনটির বিভিন্ন অংশে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। ভবন ঘেঁষে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১২ মিটার প্রস্থের তিনটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। স্টেশনের পাশেই রেলওয়ের আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে আটটি ভবনের নির্মাণকাজ চলমান আছে। স্টেশনটিতে আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি ক্যান্টিন, লকার, গাড়ি পার্কিং ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পর্যটকরা স্টেশনের লকারে লাগেজ রেখে সারা দিন সমুদ্রসৈকতে বা দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে পারবেন। এই স্টেশন দিয়ে দিনে ৪৬ হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করতে পারবেন।

প্রসঙ্গত ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারি-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরমধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। দোহাজারি থেকে কক্সবাজার রামু পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার।

রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ অংশ গেছে বোয়ালখালী উপজেলার বড় অংশজুড়ে। সেখানে দুটি স্টেশন আছে। একটি গোমদন্ডি অপরটি বেঙ্গুরা রেলস্টেশন। গোমদন্ডি এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, নব্বইয়ের দশকেও ৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করত চট্টগ্রাম-দোহাজারি রেল পথে। এরশাদ সরকারের আমলেই লোকসানের অজুহাতে একে একে প্রায় সব ট্রেন বন্ধ করে দেয়া হয়। অথচ ওই সময় ট্রেনে প্রচুর যাত্রী থাকত। স্টেশনেও প্রচুর টিকিট বিক্রি হতো। এবার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল পথে ট্রেন চলাচল শুরু হলে শুধু যাত্রীরা নয়, ব্যবসায়ীরাও লাভবান হবেন। প্রসার ঘটবে ব্যবসা বাণিজ্যের।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত