মা-বাবার পাশে শায়িত হলেন কবি মোহাম্মদ রফিক

প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের চিতলী-বৈটপুর গ্রামে মা-বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন কবি মোহাম্মদ রফিক। গতকাল বেলা ১১টায় চিতলী-বৈটপুর এলাকায় উদ্দিপন বদর সামছু বিদ্যানিকেতনে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে মা-বাবার কবরের পাশে কবিকে দাফন করা হয়। এর আগে নিজ গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের চিতলীতে অবস্থানকালে গত রোববার সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন কবি মোহাম্মদ রফিক। তাকে প্রথমে বাগেরহাট এবং পরে বরিশাল নেওয়া হয়। বরিশালের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে বিভিন্ন পরীক্ষার পর বেশকিছু শারীরিক জটিলতা ধরা পড়লে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যরা কবিকে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রওনা দেন। ঢাকায় নেওয়ার পথেই তিনি মারা যান।

মোহাম্মদ রফিকের জন্ম ২৩ অক্টোবর ১৯৪৩ সালে বাগেরহাটে। ২০১০ সালের একুশে পদকপ্রাপ্ত এ কবি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন।

একজন মননশীল আধুনিক কবি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া মোহাম্মদ রফিক খুলনা জিলা স্কুল থেকে ১৯৫৮ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ঢাকার নটর ডেম কলেজে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর রাজশাহী সরকারি কলেজে ইরেজি বিভাগে ভর্তি হন এবং স্নাতক শেষ করেন।

তার আত্মপ্রকাশ ১৯৬০-এর দশকে। পাকিস্তান আমলে ছাত্র আন্দোলন ও কবিতায় এবং স্বাধীন বাংলাদেশে আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে কাব্যিক রসদ জুগিয়ে তিনি বিখ্যাত হন। ১৯৭০ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বৈশাখী পূর্ণিমা’ প্রকাশিত হয়। ১৯৭৬ সালে প্রকাশ পায় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ধুলার সংসারে এই মাটি’।

কবির উল্লেখযোগ্য অন্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো- কীর্তিনাশা (১৯৭৯), খোলা কবিতা ও কপিলা (১৯৮৩), গাওদিয়ায় (১৯৮৬), স্বদেশী নিঃশ্বাস তুমিময় (১৯৮৮), মেঘে এবং কাদায় (১৯৯১), রূপকথা কিংবদন্তি (১৯৯৮), মৎস্য গন্ধ্যা (১৯৯৯), মাতি কিসকু (২০০০), বিষখালি সন্ধ্যা (২০০৩), নির্বাচিত কবিতা (২০০৩), কালাপানি (২০০৬), নির্বাচিত কবিতা (২০০৭), নোনাঝাউ (২০০৮), দোমাটির মুখ (২০০৯), ত্রয়ী (২০০৯), মোহাম্মদ রফিক রচনাবলী-১ (২০০৯), মোহাম্মদ রফিক রচনাবলী-২ (২০১০)।

কবিতার পাশাপাশি তার গদ্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ভালবাসার জীবনানন্দ (২০০৩), আত্মরক্ষার প্রতিবেদন (২০০১), স্মৃতি বিস্মৃতির অন্তরাল (২০০২)।

বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান মোহাম্মদ রফিক। এছাড়া আলাওল পুরস্কারসহ (১৯৮১) বিভিন্ন পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর শোক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খ্যাতনামা কবি, লেখক এবং জাহাঙ্গীরনগর

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

গতকাল এক শোক বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত এই মননশীল আধুনিক কবি বাংলা সাহিত্যে তার অবদানের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।