যমুনা নদীর বুকে প্রায় ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ঢাকার সাথে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের রেল যোগাযোগে বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রায় ৩০০ মিটার উত্তরে নির্মিত হচ্ছে দেশের এই সর্ববৃহৎ রেলওয়ে স্থাপনা। এ রেলসেতুর ২ দশমিক ১৫ কিলোমিটার অংশ ২২টি স্প্যানে দৃশ্যমান হয়েছে ইতিমধ্যে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ রেলওয়ে সেতু নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সেতুর নির্মাণে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ রেলসেতু নির্মাণে ২০২১ সালের মার্চে সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর প্রান্তে এ প্রকল্প কাজ বাস্তবায়ন করছে ডাব্লিউডি-১ ও ডাব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি ৫ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ সেতু নির্মাণে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের ৭ সহস্রাধিক কর্মী কাজ করছেন। এ সেতুতে ৫০টি পিলার ও ৪৯টি স্প্যান বসানো হবে এবং প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১০০ মিটার। এ পর্যন্ত স্প্যান বসানো হয়েছে ২২টি। ইতিমধ্যে ৩১টি পিলার বসানো শেষ হয়েছে। ওই প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ইতিমধ্যে ডাব্লিউডি-১ প্যাকেজের ৭৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং ডাব্লিউডি-২ প্যাকেজের ৫৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং সেতুর ২ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে। প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হচ্ছে। এতে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাত-দিন কাজ করছেন। নির্ধারিত সময়েই এ সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হবে। উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হয়। এতে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় ঘটে থাকে। এসব সমস্যা সমাধানে যমুনা নদীর ওপর এ রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু নির্মাণকাজ শেষ হলে কমপক্ষে ৮৮টি ট্রেন চলাচল করবে প্রতিদিন। এতে উত্তরাঞ্চল উন্নয়নে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে বিশিষ্টজনরা এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।