ইমরানকে ৫ বছরের জন্য নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে নির্বাচনে পাঁচ বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। রাষ্ট্রীয় উপহার কেনাবেচায় দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার (তোশাখানা) মামলায় ইমরানের বিরুদ্ধে আদালতের সাজা ঘোষণার পর মঙ্গলবার এ ঘোষণা দেয় ইসিপি। তোশাখানা মামলায় গত শনিবার পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাকে এক লাখ রুপি অর্থদণ্ড করা হয়। সেই দিনই লাহোরে নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন ইমরান। আদালতের রায়ের বিষয়টি উল্লেখ করে গত মঙ্গলবার ইসিপি জানায়, পাকিস্তানের সংবিধানের অনুযায়ী ইমরান খানকে ৫ বছরের জন্য নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হলো।

পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে গত বছরের এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হয় ইমরানের সরকার। এরপর থেকে নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসা ইমরান খানের বিরুদ্ধে দুই শতাধিক মামলা হয়েছে। ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর পাঞ্জাব প্রদেশে ঔপনিবেশিক আমলের শতাব্দী পুরোনো কুখ্যাত ‘আটক’ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে সন্ত্রাসীদের জন্য সংরক্ষিত সেলে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তার আইনজীবী নিয়াম হায়দার পানজোথারের পক্ষ থেকে গত সোমবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টে করা এক আবেদনে এ অভিযোগ করেন। ইমরান খানকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে স্থানান্তরে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আবেদন করেছেন পিটিআইয়ের প্রধান আইনজীবী নিয়াম। আবেদনে তাকে কারাগারে প্রথম (এ) শ্রেণির সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার আর্জি জানানো হয়। আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ৯৯ বর্গফুটের একটি কক্ষে বন্দি করে রাখা হয়েছে। সেলটি নোংরা। এর সঙ্গে সংযুক্ত শৌচাগারটিও নোংরা। এটি সাধারণত সন্ত্রাসীদের জন্য সংরক্ষিত।

তবে আদালত বলেছেন, কারাবিধি অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা পাবেন ইমরান খান। তার আইনজীবীদের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আপনারা কারাবিধি অনুযায়ী আবেদন করুন, আমরা সে অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা দেব।’

উল্লেখ্য, পিটিআই দলের চেয়ারম্যান ইমরান খানের মতো গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জুলফিকার আলী ভুট্টো, বেনজির ভুট্টো, নওয়াজ শরিফ ও শাহবাজ শরিফকে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন পাকিস্তানের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী। তিনি ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৫৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি জেনারেল আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলে সমর্থন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এর জেরে সোহরাওয়ার্দীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। তাকে ১৯৬২ সালের জানুয়ারিতে গ্রেপ্তার করা হয়। বিনা বিচারে তাকে করাচির কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে আটকে রাখা হয়। পাকিস্তানের নবম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। তিনি ১৯৭৩ সালের আগস্ট থেকে ১৯৭৭ সালের জুলাই পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৭৪ সালে এক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তিনি ছাড়া পান, তবে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। এবার তিনি সামরিক আইনে গ্রেপ্তার হন। তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজির ভুট্টো। তিনি দুই দফায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। প্রথমবার ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৯০ সালের আগস্ট পর্যন্ত। দ্বিতীয়বার ১৯৯৩ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৯৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত। তিনি তার রাজনৈতিক জীবনে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ১৯৮৫ সালের আগস্টে তিনি প্রথমবার আটক হন। এ দফায় তাকে ৯০ দিন গৃহবন্দি রাখা হয়। সবশেষ ২০০৭ সালের তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন জেনারেল পারেভজ মোশাররফকে ক্ষমতা থেকে হটাতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল পাকিস্তান। ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর এক নির্বাচনি সভায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন বেনজির।

নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। তবে তিনি কোনোবারই তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। ১৯৯০ সালের নভেম্বরে তিনি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯৩ সালের জুলাই পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন। ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৯৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। সবশেষ তিনি ২০১৩ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী হন। ২০১৭ সালের জুলাই পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। জেনারেল পারভেজ মোশাররফের ক্ষমতা দখলের পর ১৯৯৯ সালে নওয়াজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তাকে নির্বাসিত করা হয়। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে সৌদি আরবে নির্বাসনে পাঠানো হয়। পরে তিনি পাকিস্তানে ফেরেন। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে আবার গ্রেপ্তার হন নওয়াজ। দুর্নীতির মামলায় তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে দুই মাস পর তার সাজা স্থগিত হয়। তিনি কারামুক্ত হন। একই বছরের ডিসেম্বরে তিনি আবার গ্রেপ্তার হন। একটি মামলায় তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। চিকিৎসার জন্য ২০১৯ সালের নভেম্বরে দেশত্যাগের অনুমতি পান তিনি। এরপর থেকে নওয়াজ বিদেশে আছেন।

২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের মে পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পিএমএল-এন নেতা শহীদ খাকান আব্বাসি। দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৯

সালের জুলাইয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জামিন পাওয়ার পর ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি কারামুক্ত হন।

আর পিটিআই দলের প্রধান ইমরান খান পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন। গত বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের আনা আস্থা ভোটে হেরে ইমরানের সরকার ক্ষমতা হারায়। পরে শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে বিরোধীরা জোট সরকার গঠন করে।

ক্ষমতা হারানোর পর ইমরানের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হয়। জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গত ৯ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে তাকে প্রথমবার গ্রেপ্তার

করা হয়। পরে দেশটির সুপ্রিমকোর্ট তার গ্রেপ্তারকে বেআইনি ঘোষণা করে। এই মামলায় ১২ মে জামিন পান তিনি।

এর প্রায় তিন মাসের মাথায় তোশাখানা মামলায় ইমরানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেন ইসলামাবাদের একটি আদালত। রায় ঘোষণার পরই তাকে লাহোরের জামান পার্কের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। খবর বিবিসির