বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে পাথর আমদানি

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  পঞ্চগড় প্রতিনিধি

শুল্ক কর বৃদ্ধি ও স্লট ফি’র কারণে পাথর আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে। গত ১ আগস্ট থেকে সরকারিভাবে আমদানিতে শুল্ক কর বৃদ্ধি করায় স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন। এতে করে পাথরনির্ভর স্থলবন্দরটি স্থবির হয়ে পড়েছে। বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বন্দরটির ১০ হাজার শ্রমিক। বন্দর ঘুরে দেখা যায়, পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় স্থলবন্দরের ইয়ার্ডে কোনো পণ্যবাহী গাড়ি নেই। কোলাহলহীন হয়ে পড়েছে বন্দরটি। কাজ না থাকায় অলস সময় পার করছে শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ইমিগ্রেশনে যাত্রী পারাপারও চলছে ধীরগতিতেই। পাথর ভাঙা ক্রাশিং মেশিনগুলোতেও নেই শব্দ।

জানা যায়, ঈদের ছুটি শেষে ১১ জুলাই পর্যন্ত চলে পাথর আমদানি। পরে ভারত-ভুটানের মধ্যে স্লট ফি বৃদ্ধির কারণে ভারত ও ভুটানের ব্যবসায়ীরা বন্ধ করে দেন পাথর রপ্তানি। ২২ জুলাই থেকে ভারত থেকে পাথর আসলেও অধ্যাবদি বন্ধ রয়েছে ভুটানের পাথর আসা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগস্টের ১ তারিখ থেকে স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা পণ্যের শুল্ককরের বৃদ্ধির কারণে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন। বন্দরটি পাথরনির্ভরশীল হওয়ায় পাথর আমদানি না হওয়ায় কর্মহীনতায় সময় পার করছে ব্যবসায়ী ও হাজার হাজার শ্রমিকরা। বাড়তি শুল্ককর প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ সদস্যরা অনির্দিষ্টকালের জন্য আমদানি বন্ধ রাখবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বলছেন, বাংলাদেশ কাস্টমস বিদেশি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি টনে ১৩ ডলার নির্ধারণ করেছে। এতে করে ব্যবসায়ীদের আগের থেকে ৫০ টাকা হারে বেশি রাজস্ব দিতে হবে। এ হারে রাজস্ব বাড়ায় লোকসান গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের। শুল্ককর বৃদ্ধির কারণে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছে চারদেশীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দরটি। প্রায় এক মাস ধরে ভুটানের পাথর আসা বন্ধ রয়েছে। বাড়তি শুল্ক হার প্রত্যাহারের দাবিতে ব্যবসা বন্ধ রেখেছেন তারা।

স্থলবন্দরের শ্রমিক নেতা ইদ্রিস আলী বলেন, দিন দিন আমাদের এ বন্দরটিতে নতুন নতুন সমস্যায় বিপাকে পড়েছে শ্রমিকরা। গত ১২ জুলাই থেকে ভুটানের পাথর আসছে না। তার মধ্যে শুল্ককর বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবিতে পাথর ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন। যার কারণে ১ আগস্ট থেকে একেবারেই পাথর আসছে না। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে শ্রমিকদের বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। শ্রমিকদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষাসহ বন্দরটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শ্রমিক নেতারা।

সিএন্ডএফ এজেন্ট জাহাঙ্গীর আলম জানান, শুল্ক কর বৃদ্ধির কারণে ভারতীয় পাথর ও স্লট ফি বৃদ্ধির কারণে ভুটানের পাথর বন্ধ রয়েছে। ব্যবসায়ীদের রাজস্ব ফি বৃদ্ধির কারণে আমাদের পাথর আমদানিতে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তাই বাড়তি ১ ডলার এসএসমেন্ট প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রেখেছে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা ইমরুল হোসেন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, আগের আমদানিতে টনপ্রতি ১২ ডলার অ্যাসেসমেন্ট গ্রহণ করা হলেও, নতুন করে সরকারি নির্দেশে গত ১ আগস্ট থেকে প্রতি টনে ভ্যালু এক ডলার বৃদ্ধি করে ১৩ ডলার করা হয়েছে। এতে করে ভ্যাটের পরিমাণ বেড়ে ৪১ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই খুদা মিলন বলেন, বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকটি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। লিখিত আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি দুই-তিন দিনের মধ্যে বিষয়টি সমাধানে আসবে। মূলত শুল্ক বিভাগ অ্যাসেসমেন্ট কর এক ডলার বাড়ানোর কারণে ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন। শুধু বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর না, একই অবস্থা শুরু হয়েছে বুড়িমারী, ভোমরা, সোনা মসজিদ ও হিলি স্থলবন্দরেও।

বাংলাবান্ধা ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরটি দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বন্দর। বন্দরটি পাথরনির্ভরশীল হওয়ায় সরকার এখান থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে। তবে চলমান সমস্যায় চলতি অর্থবছরের যে লক্ষমাত্রা রয়েছে তা থেকে পিছিয়ে পড়ছে সরকার। আশা করি দ্রুত এই সমস্যা সমাধান হবে।