চট্টগ্রাম অঞ্চলে বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে। উন্নতি হচ্ছে জীবনযাত্রার। মহাসড়ক থেকে পানি নেমে যাওয়ায় তিনদিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। গতকাল সকাল থেকেই যান চলাচল শুরু হয়। বিকালেও তা অব্যাহত ছিল। বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় সড়কে আর জলাবদ্ধতার শঙ্কা নেই। গতকাল বিকাল থেকেই বান্দরবানের সঙ্গে শুরু হয়েছে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক স্বাভাবিক হলেও বন্যার পানির কারণে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। সড়কে দ্রুত মেরামত কাজ শুরু না হলে যানবাহন চলাচল বিঘিœত হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে বন্যায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে। উপজেলা ভিত্তিক ক্ষতির পরিমাণও শত কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বন্যার পানি নেমে গেছে। মহাসড়ক থেকে পানি নেমে যাওয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি আরো উন্নতি হবে। এদিকে মহাসড়ক থেকে বন্যার পানি নামলেও এখনও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও লোকালয় তলিয়ে আছে পানিতে। বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বেশিরভাগ এলাকা থেকে পানি না নামায় বাড়িতে ফিরতে পারছে না লোকজন। পানিবন্দি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে আশপাশের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে। আজ শুক্রবার আশ্রয় কেন্দ্রের আশ্রিতরা নিজ বাড়ি ঘরে ফিরতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলায় স্বাভাবিক হয়েছে বিদ্যুৎ পরিস্থিতিও। চারদিনের বর্ষণে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৪ উপজেলাসহ কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায়। এসব উপজেলায় গেল তিন দশকেও বানের পানি দেখা যায়নি বলে জানান স্থানীয়রা। অনেকে দাবি করেছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্মিত হয়নি। এই রেল রুটের কারণে বন্যার পানি আটকে যায়। জেলা, ত্রাণ ও দুর্যোগব্যবস্থাপনা বিভাগের হিসাব মতে, সাতকানিয়ায় সাড়ে ২২ হাজার পরিবার, চন্দনাইশে ৫ হাজার, পটিয়ায় ১৬ হাজার ৫৯৫ পরিবার এবং লোহাগাড়ায় চার হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে টানা বর্ষণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় চট্টগ্রামে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ধসে পড়েছে শত শত ঘরবাড়ি। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১৩৫ কোটি টাকার। জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। ৪ আগস্ট নগরী ও জেলায় বন্যার পানিতে সয়লাব হয় নিচু এলাকা। বন্যা পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হয়। নগরীতে জলাবদ্ধতা ছিল অন্তত চারদিন। চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও কিছু এলাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে লোকজনকে। বিশেষ করে সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় দুর্ভোগ বেশি। এসব উপজেলার বড় অংশে হাজার হাজার বাড়িঘর পানির নিচে তলিয়ে যায়। সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতি ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি।
স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জলমগ্ন এলাকার পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হবে। যেসব এলাকায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে দ্রুত মেরামত কাজ শুরুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এদিকে চলতি মাসের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও হতাহতের সংখ্যাও ছিল বেশি। বন্যায় চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় ১৫ জন পানিতে ভেসে মারা যায়। এর মধ্যে সাতকানিয়ায় ছয়, লোহাগাড়ায় চার, চন্দনাইশে দুই, রাউজানে এক, বাঁশখালীতে এক ও মহানগরীতে একজন মারা গেছেন। প্রাথমিকভাবে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা। পরে হয়তো ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পরিসংখ্যানে জানা যায়, ১৪টি উপজেলা এবং সিটি করপোরেশনের মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার ১২টি পারিবারের ৬ লাখ ৩৫ হাজার ১৩০ জন লোক বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েন। এসময় পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগ পোহান।