সবজি ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা। এ উপজেলায় বছরব্যাপী বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও শস্য উৎপাদন হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় দ্রুত বাজারজাত করে ভালো দাম পেয়ে লাভবান হন চাষিরা। তবে শাকসবজি সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনা না থাকায় মুনাফা থেকে বঞ্চিত হতে হয় তাদের। কৃষিকে এগিয়ে নিতে প্রণোদনা বাড়ানোর পাশাপাশি উন্নতজাতের বীজ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। সেই সঙ্গে কৃষি অফিসের সঙ্গে কৃষকদের নিবিড়তা বাড়ানোর প্রয়োজন বলে জানান সচেতন নাগরিকরা। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে- উপজেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১৬ হাজার ২৫৮ হেক্টর। এরমধ্যে ধানের জমির পরিমাণ ১২ হাজার ২৩ হেক্টর এবং শাকসবজি জমির পরিমাণ ৪ হাজার ৩৫০ হোক্টর। শাকসবজির মধ্যে পটল ৩৭৫ হেক্টর, মিষ্টি কুমড়া ৮৫ হেক্টর, লাউ ৯০ হেক্টর, শশা ১৪০ হেক্টর, খিরা ১৫ হেক্টর, ঝিঙ্গা ১৫ হেক্টর, বেগুন ৪৬০ হেক্টর, টমেটো ৫০ হেক্টর, করলা ৯০ হেক্টর, বরবটি ৪০ হেক্টর, ফুলকপি ১১০ হেক্টর, বাঁধাকপি ১০০ হেক্টর, মুলা ১০০ হেক্টর, শিম ১২০ হেক্টর, গাজর ২০ হেক্টর, ঢ্যাড়শ ৩৫ হেক্টর, চিচিংঙ্গা ১৫ হেক্টর, চাল কুমড়া ১০ হেক্টর, কাকরোল ১০ হেক্টর।
এছাড়া লাল শাক ৬০ হেক্টর, পুইশাক ৬০ হেক্টর, পালং শাক ৪৫ হেক্টর, কলমি ১৫ হেক্টর, সবুজ শাক ৫ হেক্টর, ডাটা ৩০ হেক্টর, মুখী কচু ২৫ হেক্টর, ওল কচু ২০ হেক্টর, সজিনা ১০ হেক্টর এবং পানি কচু ৫ হেক্টর।
যা থেকে বছরে প্রায় ৯০ হাজার ৬৭০ মেট্রিক টন শাকসবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৪৫৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এছাড়াও বছরে ধান উৎপাদন হয় ১ লাখ ৩ হাজার ৬৯৫ মেট্রিক টন। সরিষা ১ হাজার ৬০৫ মেট্রিক টন, গম ৩ হাজার ২৬০ মেট্রিক টন, ভুট্টা ২ হাজার মেট্রিক টন। যার মূল্যপ্রায় ৩৩৭ কোটি ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বদলগাছী উপজেলার মাটি বেলে-দোঁআশ। এতে করে শাকসবজির ভালো আবাদ হয়ে থাকে। এ কারণে কৃষকদের মাঝে অন্যান্য ফসলের তুলনায় শাকসবজি চাষাবাদে আগ্রহ থাকে বেশি। শাকসবজির পাশাপাশি ধানসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। তবে প্রতিনিয়ত সবজি বিক্রি করে টাকা পাওয়া যায় জন্য চাষিরা সবজি চাষে আগ্রহী। এছাড়া ভালো দাম পেয়ে লাভবান হন তারা। চকগোপাল গ্রামের বয়জেষ্ঠ্য কৃষক ফজলুর রহমান। তিনি বলেন- এক বিঘা জমিতে বছরে পর্যায়ক্রমে আলু, পটল, মিষ্টি কুমড়া ও কাঁচা মরিচের আবাদ করা হয়। যা থেকে বছরে প্রায় আড়াই লাখ টাকা আয় হয়। এর মধ্যে এ বছর ৫ কাঠা জমিতে মরিচ চাষ এবং সাথী ফসল হিসেবে লাগিয়েছি হলুদ। এরই মধ্যে মরিচ থেকে প্রায় ২ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। আরো ৮ হাজার টাকা বিক্রি হবে। এরপর হলুদ থেকে আয় করবেন খরচ বাদে প্রায় ১৫ হাজার টাকা।
একই গ্রামের কৃষক শহীদুল ইসলাম বলেন- এ এলাকার মাটি বেলে দোঁআশ। মাটিতে পানি কম থাকায় শাকসবজির আবাদ বেশি হয়। এসব সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সবজির দাম ভালো পাওয়ায় চাষাবাদে আগ্রহ থাকে।
উপজেলার দেউলিয়া গ্রামের চাষি সুকুমল চন্দ্র বলেন- চার বিঘা জমিতে ধান ও দেড় বিঘাতে শাকসবজির আবাদ করা হয়। পরিবারের চাহিদা মিটানোর পর প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ টাকার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করা হয়। চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন- যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ক্ষেত থেকে সবজি তুলে সহজেই স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রি করতে পারি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি চলে যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়। তবে ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেটে অনেক সময় ন্যায্য দাম পাওয়া যায় না। যদি সবজি সংক্ষরণের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে আমরা লাভবান হতে পারতাম।
বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাবাব ফরহান বলেন- এ উপজেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১৬ হাজার ২৫৮ হেক্টর। এরই মধ্যে শাকসবজি চাষাবাদ হয় ৪ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে। যা থেকে বছরব্যাপী বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৯০ হাজার ৬৭০ মেট্রিক টন শাকসবজি উৎপাদন হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার ওপর। এ উপজেলার শাকসবজি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়। যা থেকে কৃষকরা লাভবান হতে পারে।
তিনি বলেন- আগাম সবজি উৎপাদনের কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। স্থানীয়ভাবে সবজি প্রক্রিয়াজাত করার কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে কৃষকরা যেন তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পেয়ে লাভবান হতে পারে, সে জন্য হিমাগার স্থাপনের প্রয়োজনের কথা জানান তিনি।