ঢাকা ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দাবানলে লন্ডভন্ড হাওয়াই মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭

গৃহহীন হাজার হাজার মানুষ
দাবানলে লন্ডভন্ড হাওয়াই মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭

দাবানলে তছনছ হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপ। হাওয়াই দ্বীপের মাউই কাউন্টিতে ভয়াবহ দাবানলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭ জনে দাঁড়িয়েছে। আরো কয়েকশ’ লোক এখনো নিখোঁজ। তাছাড়া অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে। হাইওয়াই রাজ্য গভর্নর জোস গ্রিন জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক নগরী লাহাইনার অন্তত ১ হাজার ৭০০ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। তিনি জানান, শহরটির ৮০ শতাংশ এলাকা দাবানলের আগুনে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার এই দাবানলের সূত্রপাত হওয়ার পরে হারিকেন ডোরার প্রভাবে তৈরি হওয়া প্রচণ্ড বাতাসের কারণে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর কর্তৃপক্ষ প্রায় ১৪ হাজার পর্যটককে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়। তবে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এখনো অনেক মানুষের সন্ধান পায়নি কর্তৃপক্ষ। আগুন থেকে বেঁচে যাওয়া লাহাইনা শহরের বাসিন্দারা বলেছেন, তাদের বাড়ির দিকে যখন দাবানলের আগুন এগিয়ে আসছিল, তখনও তাদের সতর্ক করার জন্য কোনো সংকেত দেওয়া হয়নি। শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাউই-এর প্রায় ১১ হাজার মানুষ এই দুর্যোগের মধ্যে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে।

মাউই কাউন্টির মেয়র রিচার্ড বাইসেন ঘরবাড়ি ছেড়ে যারা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে, তাদের এখনই বাড়ি না ফিরতে বলেছেন। মাউই দ্বীপের কর্তৃপক্ষ বলেছেন, এই দাবানলে যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে অনেক বছর ও শত শত কোটি ডলার লাগবে। গভর্নর গ্রিন বলেছেন, এটিই সম্ভবত হাওয়াই দ্বীপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়। গভর্নর জোস গ্রিন বলেছেন, গৃহহীন হয়ে পড়া হাজার হাজার মানুষের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করতে হবে। প্রাথমিকভাবে হোটেলগুলোতে ২ হাজার কক্ষ চাওয়া হয়েছে তাদের জন্য। এছাড়া যেসব এলাকায় লোকজন এখনো বসবাস করতে পারছে, সেখানকার মানুষদের তাদের বাড়ির অতিরিক্ত কক্ষে আশ্রয়হীনদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, এটা হাওয়াই দ্বীপের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। মৃতের সংখ্যা এখনো বাড়ছে। শত শত ঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, লাহাইনাকে আবার নতুন করে গড়ে তুলতে বহু বছর লাগবে। এই শহরটিই মূলত দাবানলের কেন্দ্রবিন্দু। গ্রিন বলেন, লাহাইনার ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র দেখলে যে কোনো মানুষ বিস্মিত হবে। সব ভবনই নতুন করে তৈরি করতে হবে। এটা হবে একটা নতুন লাহাইনা। অন্যদিকে স্থানীয় কোস্ট গার্ড বলেছে, তারা উপকূলীয় শহর লাহাইনা থেকে ১৭ জনকে উদ্ধার করেছে। তীব্র গরম থেকে বাঁচতে সেখানে অনেকে সাগরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। স্থানীয় পুলিশ বলছে, ঠিক কতো মানুষ এখনো নিখোঁজ আছেন, তা এখনো তাদের জানা নেই। তবে সংখ্যাটি ১ হাজারের কম হবে না। পুলিশ প্রধান জন পেটেলিয়ের অবশ্য বলেছেন, যে এর মানে এই নয় যে, এসব মানুষ মারা গেছে।

পুরো দ্বীপে এখন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট নেই। সে কারণে লোকজনকে খুঁজে পাওয়াটা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এদিকে মাউই-এর বনবিভাগ জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার থেকে বনাঞ্চলের একাধিক জায়গায় দাবানলে শত শত একর বনভূমি পুড়ে গেছে। অনেক জায়গায় ছোট ছোট আকারে আগুন জ্বলছে। পরিস্থিতি এখনো বিপজ্জনক। মন্তব্য করে লোকজনকে ‘আগুন জোন’ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে মাউই বনবিভাগের প্রধান ব্রাড ভেনচুরা।

এদিকে হাওয়াইয়ের প্রধান আইন কর্মকর্তা গত শুক্রবার বলেছেন, এই রাজ্যে চলতি সপ্তাহে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ দাবানল মোকাবিলায় গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ব্যাপারে তিনি তদন্ত শুরু করেছেন। এক্ষেত্রে সরকারি দায়িত্বের ক্রমবর্ধমান সমালোচনার প্রেক্ষাপটে এই তদন্ত শুরু করা হলো। লাহাইনার বাসিন্দাদের এই প্রথমবারের মতো শহরে ফিরে আসার অনুমতি দেওয়ার পর তদন্ত কাজ শুরু করার এমন ঘোষণা দেওয়া হলো। তারা সেখানে ফিরে দেখতে পায় যে, সেখানের অধিকাংশ ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

হাওয়াইয়ের অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যান লোপেজ বলেন, তার দপ্তর এই সপ্তাহে মাউই ও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে দাবানল চলাকালে এবং এরপর গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতগুলো যাচাই করে দেখবে। তিনি আরো বলেন, ‘আমার বিভাগ দাবানলের আগে এবং দাবানল চলাকালে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর যথার্থতা বোঝার এবং সেগুলোর পর্যালোচনার ফলাফল জনগণকে জানানোর ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ সূত্র: বিবিসি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত