কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবন
ঠিকাদারের জিম্মিদশায় অনিশ্চিত নির্মাণকাজ
অরক্ষিত শত কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এএইচএম আরিফ, কুষ্টিয়া
রাজনৈতিক মদতপুষ্ট ‘হাই প্রোফাইল ঠিকাদার’ প্রতিষ্ঠানের জিম্মিদশায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে নির্মাণাধীন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ প্রকল্পের হাসপাতালের বহির্বিভাগ চালুর বিষয়টি। অভিযোগ উঠেছে নির্মাণকাজের ধীর গতিতে চরম নিরাপত্তার সংকটে হাসপাতাল ভবনে অরক্ষিত শত কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম। প্রকল্প পরিচালক এবং গণপূর্ত বিভাগ ‘দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়ে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত বিভাগের ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে একাধিকবার পত্র প্রেরণ করেছেন।
এছাড়াও নির্মাণবিধি লঙ্ঘন ও অবহেলার অভিযোগে একাধিকবার জরিমানাও করা হয়েছে বলে দাবি করেন, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। হাসপাতালের বহির্বিভাগ পূর্ব নির্ধারিত ৩০ জুন চালু না হওয়ায় স্বপ্নের মেডিকেল কলেজ নিয়ে হতাশ জেলাবাসী। দায় সংশ্লিষ্টরা দুষছেন পরস্পরকে। এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে মুঠোফোনে আলাপকালে ‘হাই প্রোফাইল ঠিকাদার’ প্রতিষ্ঠানের প্রধান জহিরুল লিমিটেডেরর স্বত্বাধিকার জহিরুল ইসলাম বলেন, ওখানে কোথায় কি কাজ হচ্ছে, সে বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক এবং গণপূর্ত বিভাগ যেটা বলবেন সেটাই সঠিক’।
আলাপকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক হাসপাতাল ভবনে নিযুক্ত ভান্ডার কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যমান অবস্থায় হাসপাতাল ভবন চালু করতে গেলে এখনো অনেক কাজ বাকি আছে। এখানে কোটি কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জামাদি চরম অরক্ষিত ও নিরাপত্তাহীন অবস্থায় বিক্ষিপ্তভাবে রাখা আছে। যে কোনো সময় বড় কোনো অনিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যবস্থা নিতে গত এপ্রিল মাস থেকে গণপূর্ত বিভাগকে একাধিকবার বলেছি, কিন্তু আজ-কাল করতে করতে এরইমধ্যে ৪ মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। আদৌ এ কাজ কবে শেষ হবে কি না তা অনিশ্চিত’।
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, ‘যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম অবহেলায় নির্মাণাধীন ছাদ ধ্বসে শ্রমিকের মৃত্যু হলো, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত হলো, সেই একই প্রতিষ্ঠান এখনো সেখানে বহাল আছে কোনো অদৃশ্য শক্তির মদতে’?
প্রকল্প দপ্তর সূত্রের তথ্যে জানা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে অনুমোদন প্রাপ্ত কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ করে ২০১৮ সালের ৩০ জুন সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগে হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু সর্বশেষ এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। নির্মাণ বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময়সীমা বেধে দেয়া হয় ৩০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত। বেঁধে দেয়া সর্বশেষ সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, ‘জেলায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হওয়ায় আশপাশের ৪ থেকে ৫ জেলার রোগীরা মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিতে ভীড় করছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অস্থায়ী হাসপাতালে। দ্রুত ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি চালু হলে আগত রোগীদের মানসম্মত উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যাবে’।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. দেলদার হোসেন বলেন, ‘নানাবিধ অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে একদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের উন্নত সেবা এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতে-কলমে শিক্ষা গ্রহণসহ তাদের দ্বারা রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে। এতে রোগীরাও বঞ্চিত হচ্ছেন প্রত্যাশিত মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা থেকে।
প্রকল্প পরিচালক চৌধুরী ডা. সরয়ার জাহান জানান, ‘নির্মাণ শেষ করে পূর্ব নির্ধারিত ৩০ জুনের মধ্যে হাসপাতাল ভবনটি চালু করতে না পারায়, সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও গণপূর্ত বিভাগের ঊর্ধ্বতন মহলে একাধিকবার তাগাদাপত্র দেয়া হয়েছে। এখানে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঝিমিয়েপড়া নির্মাণ কাজটিকে গতিশীল করা।
গণপূর্ত বিভাগ কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানত; নির্মাণকাজের ধীর গতির কারণে নির্ধারিত ৩০ জুনের মধ্যে হাসপাতাল ভবনটি চালু করা যায়নি। তবে এখন চলমান কাজগুলো শেষ করে খুব শিগগিরই অন্তত বহির্বিভাগটা চালু করার জন্য হস্তান্তর করতে পারব। তিনি জানান, কাজের গতি বাড়াতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিক তাগাদাপত্র দেয়াসহ জরিমানাও করা হয়েছে। বর্তমানে বহির্বিভাগের রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণসহ পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের চলমান কাজ দ্রুত শেষ করে হাসপাতাল ভবন চালু করা হবে’। হাই প্রোফাইল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জহিরুল লিমিটেডের কর্নধার মো. জহিরুল ইসলাম জানান, কুষ্টিয়া মেডিকেলের চলমান নির্মাণকাজ কোথায় কীভাবে হচ্ছে বা কি অবস্থায় আছে কবে নাগাদ শেষ হবে সে বিষয়ে প্রকল্প অফিস এবং গণপূর্ত বিভাগ ভালো বলতে পারবেন।