ঢাকা ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

২ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন

সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের
২ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে  ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন

আগামী ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ের এয়ারপোর্ট থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাজধানীর সেতু ভবনে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের একথা জানান। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ঢাকাকে নতুন করে সাজাচ্ছে সরকার। আগামী ২ সেপ্টেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশ পর্যন্ত ও ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

সেতুমন্ত্রী বলেন, বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশটুকু যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। এ অংশের দৈর্ঘ্য ১১.৫ কিলোমিটার। ওঠানামার জন্য থাকছে ১৫টি রাম্প। এর মধ্যে দুটি রাম্প বনানী ও মহাখালীতে আপাতত বন্ধ থাকবে। যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। থ্রি হুইলার, সাইকেল, পথচারী চলাচল করতে পারবে না। মোটরবাইক আপাতত চলাচল করতে পারবে না। এ অংশে এখনো টোল চূড়ান্ত হয়নি। আলাপ আলোচনা চলছে।

সেতুমন্ত্রী বলেন, নদীর তলদেশে চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্ণফুলী টানেল আগামী অক্টোবরের ২৮ তারিখে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন।

অক্টোবরের মাঝামাঝিতে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া আগামী সেপ্টেম্বরে ১৫০ সেতু একদিনে উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় দিলে তারিখ জানানো হবে। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকার পতনের দিবাস্বপ্ন দেখে লাভ নেই। আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক। অনেক দল নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত আছে। বিরোধীদল বলতে তো শুধু বিএনপি নয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, হাওয়া থেকে পাওয়া এ রকম অনেক দিবাস্বপ্ন বিএনপির আছে। দিবাস্বপ্ন দিবাস্বপ্নই।

সমঝোতার প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নো কেয়ারটেকার, নো পিএম রিজিগনেশন, নো ডিসজলুশন অব পার্লামেন্ট। সাংবিধানিক এসব ব্যাপারে পরিবর্তনের সুযোগ নেই। যারা বিদেশ থেকে আসছেন পরামর্শ দিতে কোনো বিদেশি বন্ধু, কংগ্রেসম্যান তত্ত্বাবধায়ক সরকার, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, সংসদের বিলুপ্তি নিয়ে কথা বলেনি। প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেনও।

এদিকে আমাদের চট্টগ্রাম অফিস জানায়, টানেল নির্মাণের মহাকর্মযজ্ঞ এখন শেষের পথে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। সেতু মন্ত্রীর এ ঘোষণায় স্বপ্নের বাস্তব রূপ লাভ করবে বলে প্রত্যাশা করছে চট্টগ্রামের মানুষ। প্রকল্প কাজে যুক্ত প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে। এখন শুধু কিছু ফিনিশিং কাজ বাকি। এরপর পুরোদমে প্রস্তুত হবে বঙ্গবন্ধু টানেল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বদলে দেবে দেশের অর্থনীতির চিত্র। টানেল ঘিরে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানা থেকে বাড়বে আয়। হবে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান। বঙ্গবন্ধু টানেল জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে। যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে দেশের শিল্প উন্নয়নে।

জানা গেছে, টানেল চালু হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। আশপাশের এলাকার আমূল পরিবর্তনে দেশের চেহারা বদলে যাবে। সেইসঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে রীতিমতো বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার জিরো পয়েন্টখ্যাত চাতুরি বাজার থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর যেতে আড়াই ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। টানেল চালু হলে আনোয়ারা থেকে সর্বোচ্চ ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর যাওয়া যাবে। অথচ দূরত্বের কারণে ফ্লাইট মিস হওয়া ছিল লোকজনের নিত্য দুর্ভোগের ঘটনা। টানেল চালু হলে সহজে আনোয়ারা হয়ে বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া চলে যেতে পারবে মানুষ। জাতীয় অর্থনীতে টানেলের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা।

তারা বলছেন, মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ রোড নির্মাণ হচ্ছে। ২০২৬ সালে এটির নির্মাণ শেষ হচ্ছে। একই সঙ্গে চলতি বছর টানেলের নির্মাণকাজও শেষ হচ্ছে। মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে টানেলকেন্দ্রীক প্রচুর শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। এতে দেশের অর্থনীতিতে দ্রুত পরিবর্তন আসবে। বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হতে পারে টানেলকেন্দ্রীক অর্থনীতির ইতিবাচক পরিবর্তনের কারণে। বলা যায় অর্থনীতি ও শিল্প উন্নয়নে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেছেন, একটি বড় শহরের পাশে সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে উপশহর গড়ে ওঠে। একটি উপশহর গড়ে ওঠার প্রধান বাধা অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধু টানেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটাবে। তাই নগরীর কাছাকাছি আনোয়ারাকে উপশহর হিসেবে গড়ে তোলা আর কঠিন হবে না। নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন শহরতলিতে যেসব গ্রোথ সেন্টার আছে, সেগুলোতে সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা গেলে সেগুলোকে উপশহর হিসেবে ঘোষণা করা যায়।

এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের উপর জনসংখ্যার চাপ দিন দিন বাড়ছে। টানেল হলে শহর সম্প্রসারিত হবে। কমবে জনসংখ্যার চাপ। সিডিএর মাস্টার প্লান প্রণয়ন কমিটির সদস্য সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, একজন নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণের মতো সুযোগ থাকতে হয় একটি উপশহরে। টানেল হলে সহজেই আনোয়ারা উপশহর হবে। বর্তমানে সিইউএফএল, কাফকো, ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি, কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকনোমিক জোন ও পারকি সৈকত রয়েছে আনোয়ারায়। টানেলের কারণে এসব সমৃদ্ধ হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, টানেল দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করতে কক্সবাজারে নির্মাণাধীন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণের চিন্তা চলছে।

এতে চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসবে। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে এ টানেল নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে চীনের সহায়তা ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি ২ শতাংশ হারে এ ঋণ দিয়েছে। চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) এই টানেল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দুটি টিউব সংবলিত নদীর তলদেশে এই মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এরমধ্যে টানেল টিউবের দৈর্ঘ ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ভেতরের ব্যস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। টানেলটি দুটি টিউবে ৪ লেনবিশিষ্ট। টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজ রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত