সুসংবাদ প্রতিদিন
ড্রাগন চাষে আজিজুলের বছরে আয় লাখ টাকা
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মো. মোশারফ হোসাইন, নকলা
পরিকল্পিতভাবে মেধা খাটালে এবং উপযুক্ত সময়ে শ্রম দিলে যে কোনো কাজে সফলতা আসে, আসে সংসারে সুখণ্ডশান্তি। এমন একজন কৃষক হলেন শেরপুরের নকলা উপজেলার পাঠাকাটা ইউনিয়নের চকপাঠাকাটা এলাকার আজিজুল ইসলাম। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আজিজুল ইসলাম ২০১৮ সালে বিভিন্ন পত্রিকায় ড্রাগন ফলের চাষে সফলতা দেখে তিনি চাষে আগ্রহী হন। ২০১৯ সালে ময়মনসিংহ হর্টিকালচার সেন্টার থেকে এক ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ৬৫টি কাটিং চারা প্রতিটি ৩৫ টাকা করে এনে বাড়ির পাশের ৫ শতাংশ জমিতে রোপণ করেন। জমি তৈরি, চারা ক্রয়, সার ও কংক্রিটের খুঁটিসহ সবমিলিয়ে খরচ হয়েছিল ৬৫ হাজার টাকা। পরের বছর ২০২০ সাল থেকে ফলন দেওয়া শুরু হয়। এলাকায় প্রথমবারের এই ফলের চাষ হওয়ায় স্থানীয়দের আগ্রহ বেড়ে যায়। পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনদের খাবারের জন্য দেওয়ার পরেও ওই বছর তিনি ড্রাগন বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকা আয় করেন। এর পরের বছর থেকে পর্যায়ক্রমে ফলন বাড়তে থাকায় তার আয়ও বাড়তে থাকে। ২০২২ সালে তিনি এক লাখ ১২ হাজার টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেন। এতে খরচ বাদে ২০২২ সালে তার লাভ হয়েছিল ৯৪ হাজার টাকা। এবছর প্রথম ধাপে ৩২ হাজার টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেছেন। তিনি আশা করছেন এবছর আরো অন্তত ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার ড্রাগন বিক্রি করতে পারবেন। এছাড়া আজিজুল হকের খামারে আছে হাঁস, মুরগি, কবুতর, ছাগল। রয়েছে বিভিন্ন শাকসবজি। তিনি এই খামারটির নাম দিয়েছেন ‘আজিজুল অ্যাগ্রো ফার্ম’। ২০২২ সালের শেষের দিকে নতুন করে আরো ৫ শতাংশ জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান সম্প্রসারণ করেছেন। সেখানে নিজের বাগানের কাটিং করা ৩৫টি চারা রোপণ করেছেন। এবছর এরই মধ্যে ২-৩টি গাছে ২-১টি করে ফল এসেছে। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ শাহীন রানা জানান, ক্যাকটাস গোত্রের এই ড্রাগন ফল গাছে রাতে ফুল ফুটে এবং সুগন্ধ ছড়ায়, তাই একে নাইট কুইন বলা হয়। ড্রাগন ফলের চাষ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের পরামর্শসহ সব প্রকার সহযোগিতা দিচ্ছে বলে তিনি জানান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী জানান, উচ্চ গুণসম্পন্ন ড্রাগন ফল চাষে সৌখিন কৃষকের পাশাপাশি সব শ্রেণির কৃষকদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। প্রায় সব ধরনের মাটিতে চাষ করা গেলেও, বেলে দোঁআশ মাটি ড্রাগনফল চাষের জন্য উত্তম। তিনি আরো জানান, উচ্চ ফলনশীল বাউ ড্রাগন-১ ও বাউ ড্রাগন-২ বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য উপযোগী। এছাড়া বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া থাইরেড, ভিয়েতনামি রেড, বারি ওয়ান ড্রাগন, ভিয়েতনামি হলুদ, ভিয়েতনামি সাদা, ভিয়েতনামি গোলাপি ও আমেরিকান হলুদ ড্রাগন চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এ ফলের চাষ বাড়াতে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বাড়ির আঙিনা ও পতিত জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন বলে জানান কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী।