অন্যরকম
এসি ছাড়াই ঠান্ডা মরুভূমির স্কুল!
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
মরুভূমির মাঝে বিশাল এক স্কুল ভবন। প্রচণ্ড গরম যখন চারপাশে, তখন স্কুলের ভেতরে তুলনামূলক অনেক ঠান্ডা। বাইরের তাপমাত্রা যখন ৫০ ডিগ্রি পেরিয়ে যায়, তখন ওই ভবনে শীতল পরিবেশে দিব্যি চলে ক্লাস। অবাক করা বিষয় হলো, সেখানে ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য কোনো এসি নেই। এটিকে স্থাপত্য কীর্তির নিদর্শন বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতের রাজস্থানে স্কুলটির অবস্থান। এর নাম রাজকুমারি রত্নাবতী গার্লস স্কুল। জয়সলমীরের মরুভূমির মাঝে ২০২১ সালের নভেম্বরে চালু হয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মরু রাজ্যের এই এলাকায় নারী শিক্ষার হার অনেকটাই কম। ফলে মেয়েদের স্কুল খুলতে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাপমাত্রা। প্রবল গরমে সেখানে বাচ্চাদের স্কুলে পড়ানোই কঠিন হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় স্কুল ভবন তৈরির দায়িত্ব পান যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের স্থপতি ডায়ানা কেলোগ। দ্রুত স্কুলের নকশা তৈরি করে ফেলেন তিনি। কিন্তু মনে ছিল একটাই চিন্তা। কীভাবে গরমের হাত থেকে বাঁচাবেন শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সেখানে থাকা কর্মীদের। সমাধান সূত্র খুঁজতে হলুদ বেলেপাথরের মরুশহর জয়সলমীর চষে বেড়ান তিনি। কেলোগ বলেন, ‘এই সময়ই গোটা বিষয়টি নজরে আসে আমার। জয়সলমীরের সব জায়গাতেই ব্যবহার হয় হলুদ বেলেপাথর, যা তাপকে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয় না। এই পাথর খুবই সস্তা। সেই কারণেই যুগ যুগ ধরে দুর্গ নির্মাণে এই পাথর ব্যবহার করেছেন রাজপুতরা।’
এরপর বেলেপাথর দিয়েই নকশা অনুযায়ী স্কুল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন মার্কিন স্থপতি কেলোগ। ভবনের ভেতরের অংশে চুন ব্যবহার করেন তিনি, যা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় ক্লাসরুমের দেয়াল। ডায়ানা কেলোগ বলেন, ‘চুন আর্দ্রতার ফলে তৈরি তাপকে বের করে দেয়। ফলে প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা থাকছে স্কুল ভবন।’ কেলোগের দাবি, বাইরের চেয়ে স্কুল ভবনের তাপমাত্রা অন্তত ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি কম। স্কুল ছাড়াও ওই ভবনে রয়েছে মেয়েদের একটি কো-অপারেটিভ সেন্টার ও এক্সিবিশন স্পেস। আর্কিটেকচারাল ডিজাইন অব ইন্ডিয়ার তরফ থেকে স্কুল ভবনটিকে ‘বিল্ডিং অব দ্য ইয়ার’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এছাড়া ভবনটিকে ঠান্ডা রাখতে নকশায় বেশ কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেন স্থপতি কেলোগ। এর মধ্যে রয়েছে জালের মতো দেয়াল তৈরি। এই দেয়াল স্কুল চত্বরের মাঝের অংশে ছায়া তৈরি করে। তাপ আটকাতে ক্লাসরুমের জানালাও অনেকটা উঁচুতে রাখেন কেলোগ। স্কুলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ চালিয়ে যেতে সোলার প্যানেল ব্যবহার করা হয়।